০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

মূল্য পেয়ে যশোরে ফুল চাষিদের মুখে হাসি

###    ফুলের চাহিদা সারাবছর কমবেশি থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে এই পণ্যটির চাহিদা থাকে বেশি। বিশেষ করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে এই মাসে লাখ লাখ টাকার ফুল বেচাবিক্রি হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফুলের দাম বেশি পাওয়ায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুল চাষিদের মুখে ফুটেছে বসন্তের হাসি।যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠ ভরা ফুল। ফুলের রাজ্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠে গোলাপের কুঁড়িতে সাদা ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। লাল গোলাপগুলো দূর থেকে পেঁজা তুলোর মতো দেখাচ্ছে। এগুলো করা হয়েছে যাতে কুঁড়ি একটু দেরিতে ফোটে। কেননা এই ফেব্রুয়ারি জুড়ে রয়েছে বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর মহান শহীদ দিবস। এই দিবসগুলোকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের ফুলচাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত দিবস, আজ ভালোবাসা দিবস। এ দুটি দিবসে প্রিয়জনের মন রাঙাতে মুখিয়ে আছে দেশের তরুণ-তরুণী, যুবসহ সব বয়সীরা। প্রিয়জনের ভালবাসা প্রকাশে ফুলই শ্রেষ্ঠ।যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষী তাদের জমিতে ধান ও পাটের চাষ বদলে সারাবছরই ফুল চাষ করছেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। সেইসব মানুষের মনের খোরাক মেটাতে ঝিকরগাছার গদখালীতে চাষীরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবসে এবং বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের এ তিনটি দিবসকে ঘিরেই হয় মূল বেচাকেনা। পাটুয়াপাড়ার বাসিন্দা ফুলচাষী সাহিদা বেগম বলেন, ‘আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়েছে ফুল। বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসের আগেই বাগানের অধিকাংশ ফুল বিক্রি হয়ে গেছে। কলি অবস্থায় যে ফুলগুলো রয়েছে তা বিক্রি করবেন ২১ ফেব্রুয়ারিতে বললেন তিনি। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৫ টাকার মতো। ৮/১০ টাকা বিক্রি হবে বলে জানালেন ফুলচাষী সাহিদা।’ ফুলচাষী ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। গত দু’মাস ফুলের বাজার একটু খারাপ গেলেও ফেব্রুয়ারিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইনস ডে এবং মহান শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি। ফুলচাষী সোহাগ হোসেন বলেন, ‘তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ফুলের বাগান পরিচর্যা করছি। এবার বিঘাপ্রতি গোলাপ এক লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’ জারবেরা ফুল ব্যবসায়ী আশরাফুল আলমের ম্যানেজার রনি ইসলাম বলেন, ‘এখন প্রতি সপ্তাহে ৬/৭ হাজার ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দুই উৎসব ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে আমরা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস্ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘সারাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৫/৬ হাজার ফুলচাষী রয়েছেন। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন। এবার এই তিনটি উৎসবকে সামনে রেখে এখানকার চাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কেএমপি’র ০২ পুলিশ সদস্য জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কারে ভূষিত

২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট

মূল্য পেয়ে যশোরে ফুল চাষিদের মুখে হাসি

প্রকাশিত সময় : ০৭:২৭:১০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

###    ফুলের চাহিদা সারাবছর কমবেশি থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাসে এই পণ্যটির চাহিদা থাকে বেশি। বিশেষ করে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, বসন্ত বরণ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে এই মাসে লাখ লাখ টাকার ফুল বেচাবিক্রি হয়। এবার তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফুলের দাম বেশি পাওয়ায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর ফুল চাষিদের মুখে ফুটেছে বসন্তের হাসি।যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠ ভরা ফুল। ফুলের রাজ্য যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালীর মাঠে গোলাপের কুঁড়িতে সাদা ক্যাপ পরিয়ে রাখা হয়েছে। লাল গোলাপগুলো দূর থেকে পেঁজা তুলোর মতো দেখাচ্ছে। এগুলো করা হয়েছে যাতে কুঁড়ি একটু দেরিতে ফোটে। কেননা এই ফেব্রুয়ারি জুড়ে রয়েছে বসন্ত দিবস, ভালবাসা দিবস আর মহান শহীদ দিবস। এই দিবসগুলোকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের ফুলচাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

গতকাল ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত দিবস, আজ ভালোবাসা দিবস। এ দুটি দিবসে প্রিয়জনের মন রাঙাতে মুখিয়ে আছে দেশের তরুণ-তরুণী, যুবসহ সব বয়সীরা। প্রিয়জনের ভালবাসা প্রকাশে ফুলই শ্রেষ্ঠ।যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়নের বহু চাষী তাদের জমিতে ধান ও পাটের চাষ বদলে সারাবছরই ফুল চাষ করছেন। তাদের উৎপাদিত রজনীগন্ধা, গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা, গ্লাডিওলাস, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, চন্দ্র মল্লিকাসহ ১১ ধরনের ফুল সারাদেশের মানুষের মন রাঙাচ্ছে। সেইসব মানুষের মনের খোরাক মেটাতে ঝিকরগাছার গদখালীতে চাষীরা এখন ব্যাস্ত সময় পার করছে। বসন্ত দিবস, ভালোবাসা দিবসে এবং বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেও রয়েছে এ ফুলের ব্যাপক চাহিদা। তাই বছরের এ তিনটি দিবসকে ঘিরেই হয় মূল বেচাকেনা। পাটুয়াপাড়ার বাসিন্দা ফুলচাষী সাহিদা বেগম বলেন, ‘আমরা গোলাপের কুঁড়িতে ক্যাপ পরিয়ে রাখি, যাতে ফুল একটু দেরি করে ফোটে। ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়েছে ফুল। বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবসের আগেই বাগানের অধিকাংশ ফুল বিক্রি হয়ে গেছে। কলি অবস্থায় যে ফুলগুলো রয়েছে তা বিক্রি করবেন ২১ ফেব্রুয়ারিতে বললেন তিনি। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি গোলাপে ক্যাপ পরানোসহ খরচ প্রায় ৫ টাকার মতো। ৮/১০ টাকা বিক্রি হবে বলে জানালেন ফুলচাষী সাহিদা।’ ফুলচাষী ও ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা, ডাবল রজনীগন্ধা (ভুট্টা) ও হাইব্রিড রজনীগন্ধা (উজ্জ্বল), গোলাপ, জারবেরা, গাঁদা এবং গ্লাডিওলাস চাষ করেছি। গত দু’মাস ফুলের বাজার একটু খারাপ গেলেও ফেব্রুয়ারিতে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে।বসন্ত উৎসব, ভ্যালেনটাইনস ডে এবং মহান শহীদ দিবসকে কেন্দ্র করে দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছি। ফুলচাষী সোহাগ হোসেন বলেন, ‘তিনটি দিবসকে সামনে রেখে ফুলের বাগান পরিচর্যা করছি। এবার বিঘাপ্রতি গোলাপ এক লাখ টাকা বিক্রির আশা করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আমাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’ জারবেরা ফুল ব্যবসায়ী আশরাফুল আলমের ম্যানেজার রনি ইসলাম বলেন, ‘এখন প্রতি সপ্তাহে ৬/৭ হাজার ফুল বিক্রি হচ্ছে। ফেব্রুয়ারি মাসের দুই উৎসব ও একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে আমরা তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস্ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘সারাদেশের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এই ফুলকে কেন্দ্র করে। প্রায় ২০ হাজার কৃষক ফুলচাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এরমধ্যে কেবল যশোরেই প্রায় ৫/৬ হাজার ফুলচাষী রয়েছেন। সারাবছর টুকটাক ফুল বিক্রি হলেও মূলত ফেব্রুয়ারি মাসের তিনটি উৎসবকে সামনে রেখেই জোরেশোরে এখানকার চাষীরা ফুল চাষ করে থাকেন। এবার এই তিনটি উৎসবকে সামনে রেখে এখানকার চাষীরা প্রায় ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।’ উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানায়, যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। ১৯৮৩ সালে গদখালীতে মাত্র ৩০ শতক জমিতে ফুল চাষ শুরু হয়। এখন চাষ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। দেশে ফুলের মোট চাহিদার ৭০ ভাগই যশোরের গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এই ফুল এখন যাচ্ছে দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াতেও।##