১০:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোবাইল ফোন বিক্রিতে চীনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চায় ভারত

  • সংবাদদাতা
  • প্রকাশিত সময় : ০৬:৫০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
  • ৫৭ পড়েছেন

মোবাইল ফোন। প্রতীকী ছবি

ভারতের মোবাইল ফোনের বাজারে অনেক দিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার করছে চীন। এখন এই বাজারে প্রভাব ফেলতে চাইছে ভারতীয় মোবাইল ফোন-নির্মাতারা। ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার ৬০ শতাংশ হচ্ছে চীনা ফোন।

ভারতীয় কোম্পানিগুলো আশা করে, তারা এক সময় নিজ দেশেই বিশ্বমানের মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে। সত্যি কি এটা করতে পারবে তারা? কীভাবেই বা তা সম্ভব হবে?

ভারতে চীনা মোবাইল ফোন
ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ফোনের মতো ওয়ানপ্লাস ফোনটিও চীনে তৈরি মোবাইল ফোন।

 

এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ শতাংশই চীনে তৈরি। এ সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় চার শতাংশ কমেছে। ২০২১ ভারতে বিক্রি হওয়া চীনা ফোনের পরিমাণ ছিল ৬৪ শতাংশ। এর কারণ হলো, ভারতীয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজারে দাঁত বসাতে শুরু করেছে।

ভারতের বাজারে চীনা ফোনের আধিপত্যকে যারা চ্যালেঞ্জ করছে- তাদের মধ্যে একটি কোম্পানি হচ্ছে মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স। তারা মোবাইল ফোনের বাজারে ঢুকেছে ২০০৮ সালে। দুই বছরের মধ্যেই তারা ভারতের অন্যতম বৃহৎ সস্তা ফোন-নির্মাতায় পরিণত হয়। যাকে বলা হচ্ছে- ফিচার ফোন।

তবে মাইক্রোম্যাক্সের এই বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগরওয়াল স্বীকার করছেন, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা খুব কঠিন।

তিনি বলেন, তার কোম্পানি যখন একটা নতুন ফোন বাজারে ছাড়ে তখন তাদের আশা থাকে- ফোনটি মোটামুটি ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হবে। কিন্তু একটি চীনা কোম্পানি বিক্রি করে তার ১০ গুণ, এক কোটি বা তারও বেশি ফোন। ফলে তারা একেকটি ফোনের দাম অনেক সস্তা রাখতে পারে।

তা ছাড়াও চীনা কোম্পানিগুলো উৎপাদন ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। তারা তাদের ফোনের প্রায় সব যন্ত্রাংশই স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে।

 

সমস্যা হলো, ভারতে মোবাইল ফোনে চার্জার, কেবল বা ব্যাটারির মতো কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয় । কিন্তু কম্পিউটার চিপস বা স্ক্রিনের মতো জটিল যন্ত্রাংশগুলো প্রায় সবই তৈরি হয় বিদেশে।

তিনি আরো বলছেন, ভারতকে মোবাইল ফোনের সব যন্ত্রাংশই নিজ দেশে তৈরি করতে হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই যে লক্ষ্য হতে হবে তা নয়, বরং ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মতো ডিভাইসগুলোর বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করতে হবে। এ রকম ভাবনা থেকে ভারতের সরকারও একটা উদ্যোগ নেয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে।

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই নামে একটি স্কিম হাতে নেয়া হয়েছে। যার লক্ষ্য ভারতে সব রকম ম্যানফ্যাকচারিং বাড়ানো। তার অংশ হিসেবে টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি তৈরি করা।

মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হলে তাদের ভর্তুকিও দিচ্ছে এই পিএলআই। বর্তমানে একটা ভারতীয় মোবাইল ফোনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। পিএলআইয়ের লক্ষ্য এই অনুপাত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।

ভারতের সেলুলার এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সমিতি আইসিইএর চেয়ারম্যান পংকজ মহিন্দ্রু বলছেন, ভারতে মোবাইল ফোন ম্যানফ্যাকচারিং এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, এবং তারা এখনই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যান্ডস্টে প্রস্তুতকারকে পরিণত হয়েছে।

ভারতের একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি লাভা ইন্টারন্যাশনাল। এর চেয়ারম্যান হরি ওম রাই বলছেন, ভারত আগামীতে ফোন উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। চীন ক্রমশ ধনী হচ্ছে, বেতন বাড়ছে। ফলে দামের ক্ষেত্রে তাদের যে সুবিধা তা তারা হারিয়ে ফেলছে।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

dainik madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

মোবাইল ফোন বিক্রিতে চীনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে চায় ভারত

প্রকাশিত সময় : ০৬:৫০:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৩

ভারতের মোবাইল ফোনের বাজারে অনেক দিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার করছে চীন। এখন এই বাজারে প্রভাব ফেলতে চাইছে ভারতীয় মোবাইল ফোন-নির্মাতারা। ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয় তার ৬০ শতাংশ হচ্ছে চীনা ফোন।

ভারতীয় কোম্পানিগুলো আশা করে, তারা এক সময় নিজ দেশেই বিশ্বমানের মোবাইল ফোন শিল্প গড়ে তুলতে পারবে। সত্যি কি এটা করতে পারবে তারা? কীভাবেই বা তা সম্ভব হবে?

ভারতে চীনা মোবাইল ফোন
ভারতের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ ফোনের মতো ওয়ানপ্লাস ফোনটিও চীনে তৈরি মোবাইল ফোন।

 

এক গবেষণায় বলা হচ্ছে, ২০২২ সালে ভারতে যত মোবাইল ফোন বিক্রি হয়েছে তার ৬০ শতাংশই চীনে তৈরি। এ সংখ্যা এক বছর আগের তুলনায় চার শতাংশ কমেছে। ২০২১ ভারতে বিক্রি হওয়া চীনা ফোনের পরিমাণ ছিল ৬৪ শতাংশ। এর কারণ হলো, ভারতীয় মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই বাজারে দাঁত বসাতে শুরু করেছে।

ভারতের বাজারে চীনা ফোনের আধিপত্যকে যারা চ্যালেঞ্জ করছে- তাদের মধ্যে একটি কোম্পানি হচ্ছে মাইক্রোম্যাক্স ইনফরমেটিক্স। তারা মোবাইল ফোনের বাজারে ঢুকেছে ২০০৮ সালে। দুই বছরের মধ্যেই তারা ভারতের অন্যতম বৃহৎ সস্তা ফোন-নির্মাতায় পরিণত হয়। যাকে বলা হচ্ছে- ফিচার ফোন।

তবে মাইক্রোম্যাক্সের এই বাড়বাড়ন্ত সত্ত্বেও এর সহপ্রতিষ্ঠাতা রাজেশ আগরওয়াল স্বীকার করছেন, চীনা স্মার্টফোন নির্মাতাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করা খুব কঠিন।

তিনি বলেন, তার কোম্পানি যখন একটা নতুন ফোন বাজারে ছাড়ে তখন তাদের আশা থাকে- ফোনটি মোটামুটি ১০ লাখ ইউনিট বিক্রি হবে। কিন্তু একটি চীনা কোম্পানি বিক্রি করে তার ১০ গুণ, এক কোটি বা তারও বেশি ফোন। ফলে তারা একেকটি ফোনের দাম অনেক সস্তা রাখতে পারে।

তা ছাড়াও চীনা কোম্পানিগুলো উৎপাদন ব্যবস্থা খুবই শক্তিশালী। তারা তাদের ফোনের প্রায় সব যন্ত্রাংশই স্থানীয় উৎস থেকে সংগ্রহ করতে পারে।

 

সমস্যা হলো, ভারতে মোবাইল ফোনে চার্জার, কেবল বা ব্যাটারির মতো কিছু যন্ত্রাংশ তৈরি হয় । কিন্তু কম্পিউটার চিপস বা স্ক্রিনের মতো জটিল যন্ত্রাংশগুলো প্রায় সবই তৈরি হয় বিদেশে।

তিনি আরো বলছেন, ভারতকে মোবাইল ফোনের সব যন্ত্রাংশই নিজ দেশে তৈরি করতে হবে। শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই যে লক্ষ্য হতে হবে তা নয়, বরং ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেটের মতো ডিভাইসগুলোর বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করতে হবে। এ রকম ভাবনা থেকে ভারতের সরকারও একটা উদ্যোগ নেয় ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে।

প্রোডাকশন লিংকড ইনসেন্টিভ বা পিএলআই নামে একটি স্কিম হাতে নেয়া হয়েছে। যার লক্ষ্য ভারতে সব রকম ম্যানফ্যাকচারিং বাড়ানো। তার অংশ হিসেবে টেলিকম ও নেটওয়ার্কিং যন্ত্রপাতি তৈরি করা।

মোবাইল ফোনের যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হলে তাদের ভর্তুকিও দিচ্ছে এই পিএলআই। বর্তমানে একটা ভারতীয় মোবাইল ফোনের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যন্ত্রাংশ ভারতে তৈরি হচ্ছে। পিএলআইয়ের লক্ষ্য এই অনুপাত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া।

ভারতের সেলুলার এ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স সমিতি আইসিইএর চেয়ারম্যান পংকজ মহিন্দ্রু বলছেন, ভারতে মোবাইল ফোন ম্যানফ্যাকচারিং এখন দ্রুতগতিতে বাড়ছে, এবং তারা এখনই বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্যান্ডস্টে প্রস্তুতকারকে পরিণত হয়েছে।

ভারতের একটি মোবাইল ফোন নির্মাতা কোম্পানি লাভা ইন্টারন্যাশনাল। এর চেয়ারম্যান হরি ওম রাই বলছেন, ভারত আগামীতে ফোন উৎপাদনের বৈশ্বিক কেন্দ্রে পরিণত হবে। চীন ক্রমশ ধনী হচ্ছে, বেতন বাড়ছে। ফলে দামের ক্ষেত্রে তাদের যে সুবিধা তা তারা হারিয়ে ফেলছে।