০৭:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রামপালে বৃদ্ধের জমি জাল দলিল : সাব-রেজিস্টারসহ ৭ জনের নামে মামলা 

###    বাগেরহাটের রামপালে মৃত্যু শয্যায় থাকা বৃদ্ধের ৬০শতাংশ জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে নেওয়ায় সাবরেজিষ্টারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাগেরহাটের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলাটি(পিটিশন মামলা নং ২৫/২০২৩) করেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ রণজিৎ কুমার পালের একমাত্র পুত্র বিশ্বজিৎ কুমার পাল। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য বাগেরহাটের পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামিরা হলো- রামপাল উপজেলা সাবরেজিস্টার নাহিদ জাহান মুনা, উপজেলার গিলাতলা গ্রামের দীনেশ পালের পুত্র ও ইউপি সচিব রতন কুমার পাল, তার পিতা দলিল গ্রহিতা দীনেশ চন্দ্র পাল, দলিল লেখক ওড়াবুনিয়া গ্রামের সবুজ কুমার মন্ডল, সৈয়দ গালিব জামান (ইশাদী), রতিন কুমার পাল, সনাক্তকারী রীতা রানী পাল।

বাদী এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ০৭-০২-২০২৩ রামপালের সাবরেজিস্ট্রার অফিসে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের মাধ্যমে দলিল গ্রহীতা দীনেশ পালের পুত্র রতন পাল দলিল লেখক সবুজ মন্ডলের মাধ্যমে তাদের জমি জাল জালিয়াতি করে দলিলটি করা হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে দলিলটি রেজিষ্ট্রি করা হলেও বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দলিল দাতা রণজিৎ কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বার্ধক্য জনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী। কথা হয় তার পুত্র বিশ্বজিৎ পালের সাথে।  তিনি বলেন, আমার বাবার জমি ইউপি সচিব রতন কুমার পাল ও আমার সৎ মা রীতা রানী পাল সাবরেজিস্টারের সাথে যোগসাজশে ভূয়া দলিল দাতা সাজিয়ে ৮৮ নং গিলাতলা মৌজার এসএ ৬৪০ খতিয়ানের ১৮৪৭ দাগের ০.৯৫ একরের মধ্যে ০.৬০ একর জমি জাল জালিয়াতি করে দলিল করে নেন। যার দলিল নং ৩৪৪/২০২৩। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, তার পিতা রণজিৎ কুমার দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন। তার স্মৃতি শক্তিও লোপ পেয়েছে। অথচ তার স্থলে অন্য ব্যক্তির ছবি ও ভূয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে মূল্যবান জমিটি রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। গ্রামে গিয়ে কথা হয়, মনোরঞ্জন পাল, তুষার কান্তি পাল ও সুদর্শন বিশ্বাসের সাথে। তারা বলেন, রণজিৎ বাবু ৭/৮ মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তার অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে বাইরে নেওয়ার মত বা তার বের হওয়ার মত অবস্থায় নেই।

অভিযুক্ত ইউপি সচিব রতন পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবুজ মন্ডল মহরীর সাথে ২ লক্ষ টাকার চুক্তি করে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে দলিল করিয়েছি। সবুজ মন্ডল সব কিছু করেছে বলে স্বীকার করেন। পরে সবুজ মন্ডলকে সোমবার দুপুরে সাবরেজিস্টারের মুখোমুখি করানো হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কথিত দাতা সাজিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ও ভূয়া ছবি ব্যবহার করে দলিল করিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সবুজ মন্ডল আরও জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউপি সচিব রতন পাল মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বিদ্যারবাহন গ্রামের মৃত যতীন্দ্র নাথ মন্ডলের পুত্র জগদীশ মন্ডলকে দাতা বানিয়ে ও ভূয়া আইডি কার্ড দিয়ে জমি দলিল করেন। সাংবাদিকরা জগদীশ মন্ডলের বাড়িতে গেলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। কথা হয় জগদীশ মন্ডলের সহচর জুয়েল খান স্বীকার করে জানান, জগদীশ এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি।

জমি জাল জালিয়াতি করে দলিল সম্পাদন ও বাগেরহাটের বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় রামপাল উপজেলা সাবরেজিষ্টার নাহিদ জাহান মুনা’র  সাথে। তার অফিসে বসে ৩৪৪/২৩ নং দলিলটি দেখতে চাইলে তিনি দলিলটি এনে দেখতে পান, দলিল দাতা ও তার আইডি কার্ড জাল করা হয়েছে। উপস্থিত মহরার সমিতির নেতৃবৃন্দরা ও বিষয়টির সত্যতা পান। এ পর্যায়ে সবুজ জাল জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেন।রামপাল উপজেলা সাবরেজিষ্টার নাহিদ জাহান মুনা বলেন, সরল বিশ্বাসে আমি জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করেছি। আমাকে মিস গাইড করে ভূয়া দাতা ও ভূয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

রামপালে বৃদ্ধের জমি জাল দলিল : সাব-রেজিস্টারসহ ৭ জনের নামে মামলা 

প্রকাশিত সময় : ০৯:১১:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৩

###    বাগেরহাটের রামপালে মৃত্যু শয্যায় থাকা বৃদ্ধের ৬০শতাংশ জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে লিখে নেওয়ায় সাবরেজিষ্টারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাগেরহাটের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলাটি(পিটিশন মামলা নং ২৫/২০২৩) করেন ভুক্তভোগী বৃদ্ধ রণজিৎ কুমার পালের একমাত্র পুত্র বিশ্বজিৎ কুমার পাল। বিজ্ঞ আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য বাগেরহাটের পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার আসামিরা হলো- রামপাল উপজেলা সাবরেজিস্টার নাহিদ জাহান মুনা, উপজেলার গিলাতলা গ্রামের দীনেশ পালের পুত্র ও ইউপি সচিব রতন কুমার পাল, তার পিতা দলিল গ্রহিতা দীনেশ চন্দ্র পাল, দলিল লেখক ওড়াবুনিয়া গ্রামের সবুজ কুমার মন্ডল, সৈয়দ গালিব জামান (ইশাদী), রতিন কুমার পাল, সনাক্তকারী রীতা রানী পাল।

বাদী এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, গত ০৭-০২-২০২৩ রামপালের সাবরেজিস্ট্রার অফিসে ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশের মাধ্যমে দলিল গ্রহীতা দীনেশ পালের পুত্র রতন পাল দলিল লেখক সবুজ মন্ডলের মাধ্যমে তাদের জমি জাল জালিয়াতি করে দলিলটি করা হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তা বজায় রেখে দলিলটি রেজিষ্ট্রি করা হলেও বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যায়। এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দলিল দাতা রণজিৎ কুমার পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বার্ধক্য জনিত কারণে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী। কথা হয় তার পুত্র বিশ্বজিৎ পালের সাথে।  তিনি বলেন, আমার বাবার জমি ইউপি সচিব রতন কুমার পাল ও আমার সৎ মা রীতা রানী পাল সাবরেজিস্টারের সাথে যোগসাজশে ভূয়া দলিল দাতা সাজিয়ে ৮৮ নং গিলাতলা মৌজার এসএ ৬৪০ খতিয়ানের ১৮৪৭ দাগের ০.৯৫ একরের মধ্যে ০.৬০ একর জমি জাল জালিয়াতি করে দলিল করে নেন। যার দলিল নং ৩৪৪/২০২৩। তিনি মামলায় উল্লেখ করেন, তার পিতা রণজিৎ কুমার দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী অবস্থায় রয়েছেন। তার স্মৃতি শক্তিও লোপ পেয়েছে। অথচ তার স্থলে অন্য ব্যক্তির ছবি ও ভূয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে মূল্যবান জমিটি রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। গ্রামে গিয়ে কথা হয়, মনোরঞ্জন পাল, তুষার কান্তি পাল ও সুদর্শন বিশ্বাসের সাথে। তারা বলেন, রণজিৎ বাবু ৭/৮ মাস মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। তার অবস্থা খুবই খারাপ। তাকে বাইরে নেওয়ার মত বা তার বের হওয়ার মত অবস্থায় নেই।

অভিযুক্ত ইউপি সচিব রতন পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, সবুজ মন্ডল মহরীর সাথে ২ লক্ষ টাকার চুক্তি করে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে দলিল করিয়েছি। সবুজ মন্ডল সব কিছু করেছে বলে স্বীকার করেন। পরে সবুজ মন্ডলকে সোমবার দুপুরে সাবরেজিস্টারের মুখোমুখি করানো হলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। কথিত দাতা সাজিয়ে ভুয়া আইডি কার্ড ও ভূয়া ছবি ব্যবহার করে দলিল করিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সবুজ মন্ডল আরও জাল- জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে বিপুল বিত্তের মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ইউপি সচিব রতন পাল মোংলা উপজেলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নের বিদ্যারবাহন গ্রামের মৃত যতীন্দ্র নাথ মন্ডলের পুত্র জগদীশ মন্ডলকে দাতা বানিয়ে ও ভূয়া আইডি কার্ড দিয়ে জমি দলিল করেন। সাংবাদিকরা জগদীশ মন্ডলের বাড়িতে গেলে সে কৌশলে পালিয়ে যায়। কথা হয় জগদীশ মন্ডলের সহচর জুয়েল খান স্বীকার করে জানান, জগদীশ এমন একটি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে শুনেছি।

জমি জাল জালিয়াতি করে দলিল সম্পাদন ও বাগেরহাটের বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা হয় রামপাল উপজেলা সাবরেজিষ্টার নাহিদ জাহান মুনা’র  সাথে। তার অফিসে বসে ৩৪৪/২৩ নং দলিলটি দেখতে চাইলে তিনি দলিলটি এনে দেখতে পান, দলিল দাতা ও তার আইডি কার্ড জাল করা হয়েছে। উপস্থিত মহরার সমিতির নেতৃবৃন্দরা ও বিষয়টির সত্যতা পান। এ পর্যায়ে সবুজ জাল জালিয়াতির বিষয়টি স্বীকার করেন।রামপাল উপজেলা সাবরেজিষ্টার নাহিদ জাহান মুনা বলেন, সরল বিশ্বাসে আমি জমির দলিল রেজিষ্ট্রি করেছি। আমাকে মিস গাইড করে ভূয়া দাতা ও ভূয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। আমি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করব।##