০৭:১৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এ যুদ্ধের কৌশল ভারত, বৃটেন ও পোল্যান্ডসহ ৩৫টি দেশের প্রতিরক্ষা একাডেমীর পাঠ্য :

ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’

###    আজ ১৪ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধে বাঙ্গালীর বীর সন্তান মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাদের আত্নত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪’ডিসেম্বর সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন শতাধিক ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বাদ পায় খুলনা। শিরোমণির এ যুদ্ধ বিখ্যাত ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা, রনকৌশল ও আত্নত্যাগ নিয়ে ভারত, পোল্যান্ড ও বৃটেনসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা কলেজে ও সামরিক একাডেমীর প্রশিক্ষনে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়’। তবে স্বাধীনতার পাচ দশকেও বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দেয়া মিত্রবাহিনীর সেনাদের মনে রাখেনি কেউ। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো হলেও ‌‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভও। এতে চরম ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় মানুষ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ সপ্তাহে চরম বিপর্যস্থ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ভারতীয় সেনারা ক্রমেই ঢাকাকে ঘিরে ফেলে। অতঃপর ১৯৭১ সালের ১৬ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজী পাকিস্থানের সৈন্যবাহিনীর বহর নিয়ে জনসম্মুখে ভারতীয় সেনা কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রেসকোর্স ময়দানে। ৯মাসের পাক ঘাতকদের জবরদখল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ঠিক ওই সময়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ভারতীয় সেনারা।খুলনার শিরোমণিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর এই সম্মুখ যুদ্ধের কারণে খুলনা শত্রু মুক্ত হয় একদিন পর অর্থাৎ বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। শিরোমণির এ যুদ্ধকে বলা হয় ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’। এটি খুলনা শহর থেকে যশোর রোড ধরে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিরোমনির এ ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর ট্যাংক ব্যাটলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ বাহিনী বিজয় লাভ করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ০৭ ডিসেম্বর পাকবাহিনী বাধ্য হয়ে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।এ সময় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমনে ৭’ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাক বাহিনী কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস থেকে পিছুহটে খুলনার শিরোমনি এলাকায় ঘটি স্থাপন করে। সেখানে পাকবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংক নিয়ে শিরোমনি ক্যাবল ফ্যাক্টরী, টিএন্ডটি ভবন, নসু খানের ভাটাসহ হাসপাতাল ও স্থানীয লোকজনের ঘরবাড়ী দখল করে ২/৩কিমি. এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরী করে। পাকিস্তান পাকবাহিনীর আরও একটা বড় ব্রিগেড খুলনার শিরোমণি, আটরা, গিলাতলা, তেলিগাতি, দৌলতপুর ও শোলগাতিয়া এলাকার একাধিক স্থানে ক্যাম্প গড়ে তুলে অগ্রসরমান ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যুহ সৃষ্টি করেন। তারমধ্যে জনশূন্য শিরোমণি এলাকায় কমান্ডার হায়াত খান সবচেয়ে বড় ক্যাম্প গড়েন এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ০৯ ডিসেম্বর যশোর থেকে খুলনার দিকে অগ্রসরমান মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে অভয়নগরের নওয়াপাড়া মুক্ত হয়। পরদিন ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী খুলনা অভিমুখে ফুলতলা উপজেলার চৌদ্দমাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। সেখানে থেকে খুলনা মুক্ত করার কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে ভারি অস্ত্রের গোলা বর্ষণ অব্যাহত রাখেন।

এদিকে, পাক বাহিনীর কমান্ডার হায়াত খান তার সাঁজোয়া ও গোলন্দাজ ব্রিগেড নিয়ে খুলনা শহরের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম এলাকা জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তাছাড়া আটরা থেকে শিরোমণি এলাকার যশোর রোডে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে।পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করেও কোনো সাড়া না পেয়ে এবং তাদের নীরবতা দেখে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ফুলতলার চৌদ্দ মাইলে অবস্থানরত মিত্রবাহিনী ১৪ ডিসেম্বর খুলনা বিজয়ের লক্ষ্যে মেজর গনি ও মেজর মহেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে ট্যাঙ্কসহ ২৮টি সাজোয়া যান নিয়ে চুড়ান্ত অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। মিত্র বাহিনীর কনভয় পথিমধ্যে ইষ্টার্ন, আলীম ও আফিল জুটমিল অতিক্রম করে শিরোমনিতে পাকবাহিনীর অবস্থানের নিশানার মধ্যে পৌছালে তারা চর্তুদিক থেকে মিত্রবাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা করলে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। প্রায় চারঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ২৬টি সাজোয়া ট্যাংক ধ্বংস ও তিন শতাধিক ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। তবে প্রচন্ড ক্ষতির পরও কিছু সংখ্যক সেনা ফুলতলার চৌদ্দ মাইল ক্যাম্পে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। সেখানে মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল দলবীর সিং, ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল মঞ্জুর, ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল যৌথভাবে এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তখন মেজর মঞ্জুর সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর হুদাকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমনের রনকৌশল তৈরি করেন। চক্রাখালি মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ০৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে গল্লামারি রেডিও সেন্টার অভিমুখে আক্রমণ শুরু হয়। রেডিও সেন্টারে নিরাপত্তার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের আগ থেকে পাঞ্জাবী সেনারা মোতায়েন ছিল। এখানে দুই দফায় আক্রমনের পর পাকিস্তানী বাহিনী ১৭ডিসেম্বর সকালে রেডিও সেন্টার ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে, মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট ইস্টার্ন জুট মিল গেট এলাকা দিয়ে ভৈরব নদ পার হয়ে শিরোমণির ঠিক পূর্বপাশে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে পশ্চিম পাশে পাক সেনাদের উদ্দেশ্যে গোলা ছুঁড়তে থাকেন। ওই সময় মেজর মঞ্জুর তার বাহিনীকে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বুধবার ও ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে বিভিন্ন দিক থেকে খন্ড খন্ড যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে শিরোমণি অবস্থানে ঘিরে ফেলেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও হায়াত খান তা না মেনে তার বাহিনীকে নিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো দলের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বাধিন সেই ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট এবং চার সহস্রাধিক সৈন্যবাহিনী। ওই রাত থেকেই মিত্রবাহিনীর রাজপুত ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দলবির সিং ও  সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে শুরু হয় চর্তুমুখী সর্বাত্মক সম্মুখ সমর। সারারাত ধরে চলা যুদ্ধে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির মুখে এক পর্যায়ে ১৭ ডিসেম্বর ভোরে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বিজয়ী মিত্রবাহিনী-মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শিরোমণি নসু খানের ইটভাটার কাছে পরাজিত পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে। ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বেলা দেড়টায় সার্কিট হাউস মাঠে লিখিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মিত্র বাহিনীর মেজর জেনারেল দলবীর সিং, ০৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল মঞ্জুর ও ০৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল যৌথভাবে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের বেল্ট ও ব্যাজ খুলে নিয়ে আত্মসমর্পণের প্রমাণাদিতে সাক্ষর করিয়ে নেন। এই যুদ্ধটিকে বলা হয় ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’। এ যুদ্ধ এত ভয়াবহ ছিল যে ভারতীয় ট্যাংক বহর, বিমান বাহিনী ও স্থলবাহিনীর যৌথ আক্রমন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে “ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি”নামে পরিচিত। বিশ্বের সেরা কিছু ট্যাংক যুদ্ধের মধ্যে শিরোমণির ট্যাঙ্ক যুদ্ধ একটি। সে দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের স্মৃতি আজও শিহরিত করে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, শিরোমণি বাজার ও এর উল্টো দিকে বিসিক শিল্প নগরী ঘিরে কমবেশি চার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এমন কোন গাছ বা ভবন ছিল না যেটি অক্ষত ছিল। প্রতিটি গাছ ও ভবনে শত শত গুলি ও শেলের আঘাতের চিহ্ন ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত দেখা গেছে। আজও কিছু তাল গাছ এবং পুরাতন বড় গাছে সে আঘাতের সাক্ষ্য খুজেঁ পাওয়া যাবে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ওইসব গাছ-পালা ও ঘরবাড়ি দেখে মানুষ শিরোমণি যুদ্ধের ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারতেন। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শিরোমণির সম্মুখ যুদ্ধ খুবই উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধের স্মরণে বর্তমান সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গিলাতলা সেনানিবাসের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৪ আগস্ট খুলনা-যশোর রোডের গা ঘেঁষে গিলাতলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এটি নির্মাণে ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকেও বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দেয়া মিত্রবাহিনীর সেনাদের মনে রাখেনি কেউ। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো হলেও ‌‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভও।

খুলনার শিরোমণি সম্মুখ যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও খানজাহান আলী থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র কমান্ডার স.ম রেজওয়ান আলী জানান, যেখানে মূল যুদ্ধ ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। হয়েছে জাহানাবাদ সেনানিবাসের সামনে। আমরা চাই, স্বাধীনতার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র এই শিরোমণিতেই একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক। যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই যুদ্ধে হতাহত মিত্রসেনাদের সঠিক হিসাব জানা নেই। তবে যুদ্ধে শতাধিক সেনা নিহত হয়েছিলেন। সদ্য প্রয়াত লে. গাজী রহমতউল্লাহ দাদু বীর প্রতীকের সাক্ষ্য মতে, মেজর জয়নাল আবেদীন ও তিনি সকাল ৯টায় যৌথভাবে সার্কিট হাউজে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। তবে অফিসিয়ালী ১৭ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত দিবস হলেও ২২ডিসেম্বর পর্যন্ত খালিশপুর, শিপইয়ার্ড ও লবণচরা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পলাতক পাক সেনাদের আটক করা হয়।

বিশ্বের সমর বিশেষজ্ঞরা ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ “এল আলামিন” যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে শুধু খুলনা জেলাতেই দেড় লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যা দেশের আর কোনও জেলাতে হয়নি। তাই শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদদের স্মরনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানে দ্রুত পদক্ষেপের দাবী খুলনাবাসীর। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

এ যুদ্ধের কৌশল ভারত, বৃটেন ও পোল্যান্ডসহ ৩৫টি দেশের প্রতিরক্ষা একাডেমীর পাঠ্য :

ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’

প্রকাশিত সময় : ০৮:৫০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২২

###    আজ ১৪ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ও ভয়াবহ ট্যাংক যুদ্ধে বাঙ্গালীর বীর সন্তান মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাদের আত্নত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়েছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধ বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪’ডিসেম্বর সম্মুখ প্রতিরোধ যুদ্ধে তিন শতাধিক ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্নত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বাদ পায় খুলনা। শিরোমণির এ যুদ্ধ বিখ্যাত ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’ হিসেবে পরিচিত। এই যুদ্ধের ভয়াবহতা, রনকৌশল ও আত্নত্যাগ নিয়ে ভারত, পোল্যান্ড ও বৃটেনসহ বিশ্বের ৩৫টি দেশের সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা কলেজে ও সামরিক একাডেমীর প্রশিক্ষনে পাঠ্য হিসেবে পড়ানো হয়’। তবে স্বাধীনতার পাচ দশকেও বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দেয়া মিত্রবাহিনীর সেনাদের মনে রাখেনি কেউ। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো হলেও ‌‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভও। এতে চরম ক্ষুব্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় মানুষ।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের শেষ সপ্তাহে চরম বিপর্যস্থ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকাররা। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ভারতীয় সেনারা ক্রমেই ঢাকাকে ঘিরে ফেলে। অতঃপর ১৯৭১ সালের ১৬ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজী পাকিস্থানের সৈন্যবাহিনীর বহর নিয়ে জনসম্মুখে ভারতীয় সেনা কমান্ডারের কাছে আত্মসমর্পণ করেন রেসকোর্স ময়দানে। ৯মাসের পাক ঘাতকদের জবরদখল থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করলেও ঠিক ওই সময়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনায় পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি বৃহৎ প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেয় মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ভারতীয় সেনারা।খুলনার শিরোমণিতে পাকবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর এই সম্মুখ যুদ্ধের কারণে খুলনা শত্রু মুক্ত হয় একদিন পর অর্থাৎ বিজয় দিবসের পরদিন ১৭ ডিসেম্বর। শিরোমণির এ যুদ্ধকে বলা হয় ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’। এটি খুলনা শহর থেকে যশোর রোড ধরে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। শিরোমনির এ ভয়াবহ ও ভয়ঙ্কর ট্যাংক ব্যাটলে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাদের যৌথ বাহিনী বিজয় লাভ করে।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ০৭ ডিসেম্বর পাকবাহিনী বাধ্য হয়ে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।এ সময় মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমনে ৭’ডিসেম্বর যশোর মুক্ত হওয়ার পর পাক বাহিনী কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বে যশোর সেনানিবাস থেকে পিছুহটে খুলনার শিরোমনি এলাকায় ঘটি স্থাপন করে। সেখানে পাকবাহিনী ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও ট্যাংক নিয়ে শিরোমনি ক্যাবল ফ্যাক্টরী, টিএন্ডটি ভবন, নসু খানের ভাটাসহ হাসপাতাল ও স্থানীয লোকজনের ঘরবাড়ী দখল করে ২/৩কিমি. এলাকাজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যুহ তৈরী করে। পাকিস্তান পাকবাহিনীর আরও একটা বড় ব্রিগেড খুলনার শিরোমণি, আটরা, গিলাতলা, তেলিগাতি, দৌলতপুর ও শোলগাতিয়া এলাকার একাধিক স্থানে ক্যাম্প গড়ে তুলে অগ্রসরমান ভারতীয় সেনা ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যুহ সৃষ্টি করেন। তারমধ্যে জনশূন্য শিরোমণি এলাকায় কমান্ডার হায়াত খান সবচেয়ে বড় ক্যাম্প গড়েন এবং মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ করতে থাকেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর যৌথ অভিযানে ০৯ ডিসেম্বর যশোর থেকে খুলনার দিকে অগ্রসরমান মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে অভয়নগরের নওয়াপাড়া মুক্ত হয়। পরদিন ১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী খুলনা অভিমুখে ফুলতলা উপজেলার চৌদ্দমাইল নামক স্থানে অবস্থান নেয়। সেখানে থেকে খুলনা মুক্ত করার কৌশল নির্ধারণের পাশাপাশি পাকবাহিনীকে লক্ষ্য করে ভারি অস্ত্রের গোলা বর্ষণ অব্যাহত রাখেন।

এদিকে, পাক বাহিনীর কমান্ডার হায়াত খান তার সাঁজোয়া ও গোলন্দাজ ব্রিগেড নিয়ে খুলনা শহরের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম এলাকা জুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তাছাড়া আটরা থেকে শিরোমণি এলাকার যশোর রোডে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী মাইন পুঁতে বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করে।পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রচন্ড গোলাবর্ষণ করেও কোনো সাড়া না পেয়ে এবং তাদের নীরবতা দেখে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে ফুলতলার চৌদ্দ মাইলে অবস্থানরত মিত্রবাহিনী ১৪ ডিসেম্বর খুলনা বিজয়ের লক্ষ্যে মেজর গনি ও মেজর মহেন্দ্র সিংয়ের নেতৃত্বে ট্যাঙ্কসহ ২৮টি সাজোয়া যান নিয়ে চুড়ান্ত অভিযান শুরু করে যৌথবাহিনী। মিত্র বাহিনীর কনভয় পথিমধ্যে ইষ্টার্ন, আলীম ও আফিল জুটমিল অতিক্রম করে শিরোমনিতে পাকবাহিনীর অবস্থানের নিশানার মধ্যে পৌছালে তারা চর্তুদিক থেকে মিত্রবাহিনীর ওপর অতর্কিতে হামলা করলে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। প্রায় চারঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর ২৬টি সাজোয়া ট্যাংক ধ্বংস ও তিন শতাধিক ভারতীয় সেনা ও মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়। তবে প্রচন্ড ক্ষতির পরও কিছু সংখ্যক সেনা ফুলতলার চৌদ্দ মাইল ক্যাম্পে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। সেখানে মিত্রবাহিনীর মেজর জেনারেল দলবীর সিং, ৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল মঞ্জুর, ৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল যৌথভাবে এ যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন। তখন মেজর মঞ্জুর সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর হুদাকে সঙ্গে নিয়ে আক্রমনের রনকৌশল তৈরি করেন। চক্রাখালি মাধ্যমিক স্কুল থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ০৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর জয়নাল আবেদিনের নেতৃত্বে গল্লামারি রেডিও সেন্টার অভিমুখে আক্রমণ শুরু হয়। রেডিও সেন্টারে নিরাপত্তার জন্য অসহযোগ আন্দোলনের আগ থেকে পাঞ্জাবী সেনারা মোতায়েন ছিল। এখানে দুই দফায় আক্রমনের পর পাকিস্তানী বাহিনী ১৭ডিসেম্বর সকালে রেডিও সেন্টার ক্যাম্পে অস্ত্র সমর্পণ করতে বাধ্য হয়।

অপরদিকে, মিত্রবাহিনীর একটি ইউনিট ইস্টার্ন জুট মিল গেট এলাকা দিয়ে ভৈরব নদ পার হয়ে শিরোমণির ঠিক পূর্বপাশে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে পশ্চিম পাশে পাক সেনাদের উদ্দেশ্যে গোলা ছুঁড়তে থাকেন। ওই সময় মেজর মঞ্জুর তার বাহিনীকে নিয়ে ১৫ ডিসেম্বর বুধবার ও ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সারাদিন ধরে বিভিন্ন দিক থেকে খন্ড খন্ড যুদ্ধ করে পাকবাহিনীকে শিরোমণি অবস্থানে ঘিরে ফেলেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করলেও হায়াত খান তা না মেনে তার বাহিনীকে নিয়ে যুদ্ধ অব্যাহত রাখেন। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডো দলের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের নেতৃত্বাধিন সেই ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট এবং চার সহস্রাধিক সৈন্যবাহিনী। ওই রাত থেকেই মিত্রবাহিনীর রাজপুত ব্যাটেলিয়ানের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল দলবির সিং ও  সেক্টর কমান্ডার মেজর মঞ্জুরের নেতৃত্বে শুরু হয় চর্তুমুখী সর্বাত্মক সম্মুখ সমর। সারারাত ধরে চলা যুদ্ধে প্রবল ক্ষয়ক্ষতির মুখে এক পর্যায়ে ১৭ ডিসেম্বর ভোরে পর্যুদস্ত পাকবাহিনী আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন বিজয়ী মিত্রবাহিনী-মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শিরোমণি নসু খানের ইটভাটার কাছে পরাজিত পাক সেনারা আত্মসমর্পণ করে। ১৭ ডিসেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বেলা দেড়টায় সার্কিট হাউস মাঠে লিখিত আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মিত্র বাহিনীর মেজর জেনারেল দলবীর সিং, ০৮ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর আবুল মঞ্জুর ও ০৯ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল যৌথভাবে পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার হায়াত খানের বেল্ট ও ব্যাজ খুলে নিয়ে আত্মসমর্পণের প্রমাণাদিতে সাক্ষর করিয়ে নেন। এই যুদ্ধটিকে বলা হয় ‘ট্যাংক ব্যাটল অফ শিরোমণি’। এ যুদ্ধ এত ভয়াবহ ছিল যে ভারতীয় ট্যাংক বহর, বিমান বাহিনী ও স্থলবাহিনীর যৌথ আক্রমন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঐতিহাসিক এ যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে “ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি”নামে পরিচিত। বিশ্বের সেরা কিছু ট্যাংক যুদ্ধের মধ্যে শিরোমণির ট্যাঙ্ক যুদ্ধ একটি। সে দিনের ভয়াবহ যুদ্ধের স্মৃতি আজও শিহরিত করে প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের।

স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, শিরোমণি বাজার ও এর উল্টো দিকে বিসিক শিল্প নগরী ঘিরে কমবেশি চার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এমন কোন গাছ বা ভবন ছিল না যেটি অক্ষত ছিল। প্রতিটি গাছ ও ভবনে শত শত গুলি ও শেলের আঘাতের চিহ্ন ১৯৮০-৮১ সাল পর্যন্ত দেখা গেছে। আজও কিছু তাল গাছ এবং পুরাতন বড় গাছে সে আঘাতের সাক্ষ্য খুজেঁ পাওয়া যাবে। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ওইসব গাছ-পালা ও ঘরবাড়ি দেখে মানুষ শিরোমণি যুদ্ধের ভয়াবহতা আন্দাজ করতে পারতেন। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শিরোমণির সম্মুখ যুদ্ধ খুবই উল্লেখযোগ্য। এই যুদ্ধের স্মরণে বর্তমান সরকারের সময় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গিলাতলা সেনানিবাসের সামনে একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ৪ আগস্ট খুলনা-যশোর রোডের গা ঘেঁষে গিলাতলায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসলাম স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। এটি নির্মাণে ৫৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু স্বাধীনতার সাড়ে চার দশকেও বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন দেয়া মিত্রবাহিনীর সেনাদের মনে রাখেনি কেউ। বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা জানানো হলেও ‌‘ট্যাঙ্ক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদ ভারতীয় সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নির্মিত হয়নি কোন স্মৃতি স্তম্ভও।

খুলনার শিরোমণি সম্মুখ যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ও খানজাহান আলী থানা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ’র কমান্ডার স.ম রেজওয়ান আলী জানান, যেখানে মূল যুদ্ধ ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেই স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ হয়নি। হয়েছে জাহানাবাদ সেনানিবাসের সামনে। আমরা চাই, স্বাধীনতার শেষ যুদ্ধক্ষেত্র এই শিরোমণিতেই একটা স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক। যুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই যুদ্ধে হতাহত মিত্রসেনাদের সঠিক হিসাব জানা নেই। তবে যুদ্ধে শতাধিক সেনা নিহত হয়েছিলেন। সদ্য প্রয়াত লে. গাজী রহমতউল্লাহ দাদু বীর প্রতীকের সাক্ষ্য মতে, মেজর জয়নাল আবেদীন ও তিনি সকাল ৯টায় যৌথভাবে সার্কিট হাউজে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। তবে অফিসিয়ালী ১৭ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত দিবস হলেও ২২ডিসেম্বর পর্যন্ত খালিশপুর, শিপইয়ার্ড ও লবণচরা থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পলাতক পাক সেনাদের আটক করা হয়।

বিশ্বের সমর বিশেষজ্ঞরা ট্যাংক ব্যাটল অব শিরোমনি’র যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম ভয়াবহ “এল আলামিন” যুদ্ধের সাথে তুলনা করেছেন। বাঙালীর স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের মধ্যে শুধু খুলনা জেলাতেই দেড় লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছেন, যা দেশের আর কোনও জেলাতে হয়নি। তাই শিরোমনি’র যুদ্ধে শহীদদের স্মরনে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানে দ্রুত পদক্ষেপের দাবী খুলনাবাসীর। ##