০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক বালুর ২০ তম হত্যাবার্ষিকী আজ : সাংবাদিক হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষুব্ধ সবাই

  • সুনীল দাস :
  • প্রকাশিত সময় : ০২:৩২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
  • ৪৪ পড়েছেন

####
খুলনার একুশে পদক প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক দৈনিক জন্মভূমি ও দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের ২০ তম বার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে নিজ অফিসের সামনে একদল ঘাতকের বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় সকল আসামি খালাশ পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় পাঁচ আসামিকে আদালত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদ- করেন। জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিচারক মোঃ সাইফুজ্জামান হিরো গত ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলো, স্বাধীন ওরফে সৈয়দ ইকবাল হোসেন, নজু ওরফে খোড়া নজু ওরফে নজরুল ইসলাম, রিমন ওরফে আসাদুজ্জামান, জাহিদ ওরফে সবুজ ওরফে জাহিদুর রহমান এবং মাসুম ওরফে জাহাঙ্গীর। এদের মধ্যে জাহিদ ওরফে সবুজ উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অন্য তিনজন খুলনা জেলা কারাগারে থাকলেও মাসুম ওরফে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছে। সে রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা উল্লেখ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গত ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। মামলার নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকা-ের কিছু দিন আগে থেকেই হুমায়ূন কবীর বালুকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। বিষয়টি তিনি এবং তার ভাই এসএম জাহিদ হোসেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছিলেন। আততায়ীদের বোমা হামলায় নিহত আরেক প্রথিতযশা সাংবাদিক মানিক সাহার সাথে কলম সৈনিক বালুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানিক সাহা হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ওই কেস নিয়ে বালু যেন বাড়াবাড়ি না করেন-সে ব্যাপারে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি টেলিফোনে হুশিয়ারি বার্তা দেয়। চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধের সন্ত্রাসীরা তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। ওই দলের আঞ্চলিক নেতা বিডিআর আলতাফ ঘাতক দলের নেতৃত্ব দেয় বলে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছিল।

খুনের নেপথ্যের কুশীলবরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে :
সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলার পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- হলেও নেপথ্যের কুশীলবরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে। পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্টের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছে জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আরিফ মাহমুদ লিটন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ মামলাটির তদন্ত এবং অধিকতর তদন্ত করেও নির্মম ওই হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে পারেনি। তাদের তদন্ত কাজে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ছাপ সম্পূর্ণভাবে ফুটে ওঠেনি। পিপি আরও বলেন, সাংবাদিক নেতা হুমায়ূন কবীর বালু খুনের পর হত্যা ও বিস্ফোর দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দু’টি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা একই। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার আগে অপর একটি আদালতে হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। সেই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে সমর্থ না হওয়ায় আসামিরা খালাশ পায়। বিস্ফোরক আইনের মামলায় আদালত আসামিদের সাজা দিয়েছেন। কিন্তু এ রায় নিয়ে নিহত বালু’র পরিবার এবং খুলনাঞ্চলের গনমাধ্যম কর্মীরা অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘাতকের হাতে সাংবাদিক হত্যা মামলায় সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হয়নি। এরমধ্যে খুলনার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হুমায়ূন কবীল বালু, মানিক সাহা, বেলাল উদ্দিন, রশিদ খোকন, জনকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক যশোরের শামসুর রহমান কেবল, দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক এম.আর.মুকুল, সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক স.ম.আলাউদ্দিনসহ গত তিন দশকে যে সকল সাংবাদিক নিহত হয়েছেন তাদেও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার ভুক্তবোগী পরিবারগুলো পায়নি। যে কারণে খুলনাঞ্চলের সাংবাদিক সমাজ চরম ক্ষুব্ধ রয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ জুন, সকাল আনুমানিক ১০ টা। মেয়ে টুম্পা এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় হুমায়ূন কবীর বালু তার সন্তানদের নিয়ে মাকে মিষ্টি খাওয়াতে ইকবাল নগরস্থ বাসায় যান। দুপুর ১২ টার পরে তিনি সেখান থেকে জন্মভূমি ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। (খুলনা মেট্রো খ-১১-০০৫২) নাম্বারের প্রাইভেট কার থেকে তার বড় ছেলে আসিফ কবীর, মেয়ে হোসনা মেহেরুবা টুম্পা, ছোট ছেলে আশিক কবীর এবং ড্রাইভার নাছিম প্রথমে নামেন। এরপর তিনি গাড়ী থেকে নেমে অফিস ও বাসভবনের ক্লবসিবল গেটের সামনে পৌছানো মাত্রই ঘাতকেরা তার পেছন দিক থেকে বোম চার্জ করে। বোমার আঘাতে তার কোমর, পেটে ও পায়ে গুরুতর জখম হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড় টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পরদিন ২৮ জুন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক মারুফ আহম্মদ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার থানা পুলিশের হাত ঘুরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপর বর্তায়। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট ডিবি’র পরিদর্শক শেখ মহিউদ্দিন চৌধুরী আট জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ছয় জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে বিচার কাজ শুরু করেন। বিচারের এক পর্যায়ে আদালতের এপিপি’র এবং নিহতের ছেলে আসিফ কবীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি খুলনা জোনকে নির্দেশ দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে সিআইডি’র সাত জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিআইডি’র এএসপি মোঃ শাহাদৎ হোসেন আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। আসামি সাইদুর রহমান, বাবুল, মোঃ সেলিম এবং নাসির খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা তাদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।
সূত্র মতে, আসামি মোঃ রিপন আহম্মেদ ওরফে সোয়েব, সুমন ওরফে শরিফুজ্জামান, আঃ রশিদ তপন ওরফে দাদা তপন ওরফে আঃ রশিদ মালিথা ওরফে ইমন, বিডিআর আলতাফ ওরফে সিদ্দিক এবং শ্যামল ওরফে দিদার ওরফে দিদারুল ইসলাম বিভিন্ন সময় পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে এনকাউন্টারে মারা গেছে।
সূত্র জানান, ট্রাইব্যুনাল গত ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষনার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। ওই দিন রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ১৬ মার্চ করা হয়। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সেদিন তারিখ পিছিয়ে ২৪ মার্চ পূণরায় দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ধুত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল রায়ের জন্য আদালত দিন ধার্য করেছিলেন। মহামারি করোনার কারণে ওই বছর ২৫ মার্চের পর থেকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রায় ঘোষণার কাজ ঝুলে ছিল। পরবর্তিতে ৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষনার দিন ধার্য হয়। সে দিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পুণরায় বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি পুণরায় বিচার কাজ শুরুর আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন-মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। হত্যাকা-ের অনেক আলামত আদালতে উপস্থাপন হয়নি। এ অবস্থায় রায় ঘোষিত হলে রাষ্ট্রপক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে পুণরায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। আদালতের বিভিন্ন কার্যদিবসে চার্জশিটভুক্ত ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আট জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

নির্ভিক সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় সাংবাদিক বালু খুন হন :
সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে আদালত উল্লেখ করেছিলেন, ২০০৪ সালে তৎকালীন সময়ে খুলনাসহ দক্ষিাণাঞ্চল সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। নির্ভিক সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক হুমায়ুন কবীল বালু। তিনি জন্মভূমি ও সান্ধ্য দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকাসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদী হিসেবে সোচ্চার ছিলেন। সে কারণে তিনি তখনকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল ও সংগঠনের টার্গেটে পরিণত হন। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় তিনি প্রাণ হারান। এজাহারকারী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে-দ-িতরা তখন ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। তৎকালে ঘটে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা খুনের ধারাবাহিকতায় অকুতোভয় কলম সৈনিক বালু হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিল।
জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষন থেকে জানা গেছে, ঘটনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সহজেই অনুমান করা যাবে-তখনকার সময়ে অত্র মামলার ঘটনাসহ কোনো চাঞ্চল্যকর হত্যা বা বিস্ফোরনের মামলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকবে না, থাকলেও সাক্ষ্য দিবে না, এটাই স্বাভাবিক। বিস্ফোরনের ঘটনার বিষয়ে চাক্ষুস সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন নাই। কিন্তু, ঘটনার অব্যবহিত পরেই দু’জন স্থানীয় মানুষের সাক্ষ্য মামলাটির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের একজন রংমিস্ত্রি মিন্টু হাওলাদার, আরেকজন চা বিক্রেতা হাফিজুর রহমান। তারা হত্যাকা-ের কয়েকদিন পর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদাণ করেন। তারা অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে আসামিদের নাম উল্লেখ করেন, কিভাবে তাদের চেনেন-নাম জানেন এবং ঘটনার সময় সনাক্ত করেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। তারা হত্যাকা-ের পর আসামিদের সম্পৃক্ত করে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, ১৪-১৫ বছর পর আদালতে একই রূপ বক্তব্য প্রদাণ করেন। সাক্ষী মিন্টুকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা না করায় এবং হাফিজুর রহমানকে জেরার মাধ্যমে কোনো স্ববিরোধীতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের সাক্ষ্য সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য।
মামলার এজাহারকারী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য, অন্যান্য মৌখিক সাক্ষ্য ও পারিপার্শিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত মনে করেন-আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকা অফিসের সামনে শক্তিশালী বোমার বিস্ফারন ঘটিয়ে সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ সূত্রে আরও জানা যায়, সাংবাদিক বালু হত্যাকা-ের একই সময়ে খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, জনকন্ঠ পত্রিকার যশোরের সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল, সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক স.ম.আলাউদ্দিন, দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক মুকুল এবং খুলনার বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা কমরেড রতন সেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মমভাবে নিহত হন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্ভিক সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় প্রাণ হারান।
এদিকে, বৃহষ্পতিবার সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালুর ২০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে হত্যাকান্ডের পুন:তদন্তসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী আহবান করেছে খুলনার পেশাজীবী সাংবাদিক সুরক্ষা মঞ্চ। এছাড়া বালুর পরিবার, দৈনিক জন্মভুমি ও খুলনা প্রেসক্লাব বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

গোপালগঞ্জে অপচিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, কথিত ডাক্তার আটক

সাংবাদিক বালুর ২০ তম হত্যাবার্ষিকী আজ : সাংবাদিক হত্যার সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষুব্ধ সবাই

প্রকাশিত সময় : ০২:৩২:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

####
খুলনার একুশে পদক প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক দৈনিক জন্মভূমি ও দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকার সম্পাদক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের ২০ তম বার্ষিকী আজ। ২০০৪ সালের এই দিনে নিজ অফিসের সামনে একদল ঘাতকের বোমা হামলায় তিনি নিহত হন। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় রাষ্ট্র পক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় সকল আসামি খালাশ পেলেও বিস্ফোরক আইনের মামলায় পাঁচ আসামিকে আদালত যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- ও ১০ হাজার টাকা করে অর্থদ- করেন। জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিচারক মোঃ সাইফুজ্জামান হিরো গত ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এ রায় ঘোষণা করেন। সাজাপ্রাপ্তরা হলো, স্বাধীন ওরফে সৈয়দ ইকবাল হোসেন, নজু ওরফে খোড়া নজু ওরফে নজরুল ইসলাম, রিমন ওরফে আসাদুজ্জামান, জাহিদ ওরফে সবুজ ওরফে জাহিদুর রহমান এবং মাসুম ওরফে জাহাঙ্গীর। এদের মধ্যে জাহিদ ওরফে সবুজ উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অন্য তিনজন খুলনা জেলা কারাগারে থাকলেও মাসুম ওরফে জাহাঙ্গীর পলাতক রয়েছে। সে রূপসা উপজেলার রহিমনগর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা উল্লেখ করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে গত ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল। মামলার নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মামলার সাক্ষীদের জবানবন্দির উদ্ধৃতি দিয়ে লেখা অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকা-ের কিছু দিন আগে থেকেই হুমায়ূন কবীর বালুকে টেলিফোনে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। বিষয়টি তিনি এবং তার ভাই এসএম জাহিদ হোসেন তৎকালীন পুলিশ কমিশনারকে জানিয়েছিলেন। আততায়ীদের বোমা হামলায় নিহত আরেক প্রথিতযশা সাংবাদিক মানিক সাহার সাথে কলম সৈনিক বালুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। মানিক সাহা হত্যাকা-ে জড়িতদের বিচারের দাবিতে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ওই কেস নিয়ে বালু যেন বাড়াবাড়ি না করেন-সে ব্যাপারে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি টেলিফোনে হুশিয়ারি বার্তা দেয়। চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধের সন্ত্রাসীরা তার উপর ক্ষিপ্ত ছিল। ওই দলের আঞ্চলিক নেতা বিডিআর আলতাফ ঘাতক দলের নেতৃত্ব দেয় বলে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছিল।

খুনের নেপথ্যের কুশীলবরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে :
সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলার পাঁচ আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদ- হলেও নেপথ্যের কুশীলবরা পর্দার অন্তরালেই রয়ে গেছে। পুলিশের দুর্বল তদন্ত রিপোর্টের কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে মন্তব্য করেছে জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর আরিফ মাহমুদ লিটন। তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ মামলাটির তদন্ত এবং অধিকতর তদন্ত করেও নির্মম ওই হত্যাকা-ের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতাদের খুঁজে বের করতে পারেনি। তাদের তদন্ত কাজে দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের ছাপ সম্পূর্ণভাবে ফুটে ওঠেনি। পিপি আরও বলেন, সাংবাদিক নেতা হুমায়ূন কবীর বালু খুনের পর হত্যা ও বিস্ফোর দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া পৃথক দু’টি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা একই। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার রায় ঘোষিত হওয়ার আগে অপর একটি আদালতে হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়। সেই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে সমর্থ না হওয়ায় আসামিরা খালাশ পায়। বিস্ফোরক আইনের মামলায় আদালত আসামিদের সাজা দিয়েছেন। কিন্তু এ রায় নিয়ে নিহত বালু’র পরিবার এবং খুলনাঞ্চলের গনমাধ্যম কর্মীরা অসন্তুষ্ট। বিশেষ করে খুলনা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়াসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঘাতকের হাতে সাংবাদিক হত্যা মামলায় সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার হয়নি। এরমধ্যে খুলনার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ হুমায়ূন কবীল বালু, মানিক সাহা, বেলাল উদ্দিন, রশিদ খোকন, জনকন্ঠ পত্রিকার সাংবাদিক যশোরের শামসুর রহমান কেবল, দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক এম.আর.মুকুল, সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক স.ম.আলাউদ্দিনসহ গত তিন দশকে যে সকল সাংবাদিক নিহত হয়েছেন তাদেও হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার ভুক্তবোগী পরিবারগুলো পায়নি। যে কারণে খুলনাঞ্চলের সাংবাদিক সমাজ চরম ক্ষুব্ধ রয়েছে।
মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৭ জুন, সকাল আনুমানিক ১০ টা। মেয়ে টুম্পা এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখায় হুমায়ূন কবীর বালু তার সন্তানদের নিয়ে মাকে মিষ্টি খাওয়াতে ইকবাল নগরস্থ বাসায় যান। দুপুর ১২ টার পরে তিনি সেখান থেকে জন্মভূমি ভবনের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। (খুলনা মেট্রো খ-১১-০০৫২) নাম্বারের প্রাইভেট কার থেকে তার বড় ছেলে আসিফ কবীর, মেয়ে হোসনা মেহেরুবা টুম্পা, ছোট ছেলে আশিক কবীর এবং ড্রাইভার নাছিম প্রথমে নামেন। এরপর তিনি গাড়ী থেকে নেমে অফিস ও বাসভবনের ক্লবসিবল গেটের সামনে পৌছানো মাত্রই ঘাতকেরা তার পেছন দিক থেকে বোম চার্জ করে। বোমার আঘাতে তার কোমর, পেটে ও পায়ে গুরুতর জখম হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর দেড় টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এ হত্যাকান্ডের ঘটনার পরদিন ২৮ জুন খুলনা সদর থানার উপ-পরিদর্শক মারুফ আহম্মদ ১০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১২ জন আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩, ৪ ও ৬ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার থানা পুলিশের হাত ঘুরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপর বর্তায়। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট ডিবি’র পরিদর্শক শেখ মহিউদ্দিন চৌধুরী আট জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ছয় জনকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন জানান। আদালত চার্জশিট গ্রহণ করে বিচার কাজ শুরু করেন। বিচারের এক পর্যায়ে আদালতের এপিপি’র এবং নিহতের ছেলে আসিফ কবীরের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি খুলনা জোনকে নির্দেশ দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে সিআইডি’র সাত জন কর্মকর্তা তদন্ত করেছেন। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিআইডি’র এএসপি মোঃ শাহাদৎ হোসেন আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। আসামি সাইদুর রহমান, বাবুল, মোঃ সেলিম এবং নাসির খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি উল্লেখ করে তদন্ত কর্মকর্তা তাদেরকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করেন।
সূত্র মতে, আসামি মোঃ রিপন আহম্মেদ ওরফে সোয়েব, সুমন ওরফে শরিফুজ্জামান, আঃ রশিদ তপন ওরফে দাদা তপন ওরফে আঃ রশিদ মালিথা ওরফে ইমন, বিডিআর আলতাফ ওরফে সিদ্দিক এবং শ্যামল ওরফে দিদার ওরফে দিদারুল ইসলাম বিভিন্ন সময় পুলিশ ও র‌্যাবের সাথে এনকাউন্টারে মারা গেছে।
সূত্র জানান, ট্রাইব্যুনাল গত ২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মামলার রায় ঘোষনার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। ওই দিন রায় ঘোষণার তারিখ পিছিয়ে ১৬ মার্চ করা হয়। রায় প্রস্তুত না হওয়ায় সেদিন তারিখ পিছিয়ে ২৪ মার্চ পূণরায় দিন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর করোনা ভাইরাস জনিত উদ্ধুত পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ২৯ এপ্রিল রায়ের জন্য আদালত দিন ধার্য করেছিলেন। মহামারি করোনার কারণে ওই বছর ২৫ মার্চের পর থেকে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় রায় ঘোষণার কাজ ঝুলে ছিল। পরবর্তিতে ৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষনার দিন ধার্য হয়। সে দিন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পুণরায় বিচারিক কার্যক্রম শুরুর আবেদন করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিশেষ পিপি পুণরায় বিচার কাজ শুরুর আবেদনে উল্লেখ করেছিলেন-মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। হত্যাকা-ের অনেক আলামত আদালতে উপস্থাপন হয়নি। এ অবস্থায় রায় ঘোষিত হলে রাষ্ট্রপক্ষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে পুণরায় সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। আদালতের বিভিন্ন কার্যদিবসে চার্জশিটভুক্ত ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আট জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।

নির্ভিক সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় সাংবাদিক বালু খুন হন :
সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু হত্যাকা-ের পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের হওয়া মামলার রায়ের পর্যবেক্ষনে আদালত উল্লেখ করেছিলেন, ২০০৪ সালে তৎকালীন সময়ে খুলনাসহ দক্ষিাণাঞ্চল সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে পরিচিত ছিল। নির্ভিক সাংবাদিকতা ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার কারণে নির্মমভাবে খুন হন সাংবাদিক হুমায়ুন কবীল বালু। তিনি জন্মভূমি ও সান্ধ্য দৈনিক রাজপথের দাবী পত্রিকাসহ বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সেমিনারে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিবাদী হিসেবে সোচ্চার ছিলেন। সে কারণে তিনি তখনকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী দল ও সংগঠনের টার্গেটে পরিণত হন। নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল জনযুদ্ধের সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় তিনি প্রাণ হারান। এজাহারকারী, তদন্ত কর্মকর্তাসহ কয়েকজন সাক্ষীর জবানবন্দিতে উঠে এসেছে-দ-িতরা তখন ওই সন্ত্রাসী সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিল। তৎকালে ঘটে যাওয়া কয়েকজন সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতা খুনের ধারাবাহিকতায় অকুতোভয় কলম সৈনিক বালু হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছিল।
জননিরাপত্তা বিঘœকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-এর বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষন থেকে জানা গেছে, ঘটনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনা করলে সহজেই অনুমান করা যাবে-তখনকার সময়ে অত্র মামলার ঘটনাসহ কোনো চাঞ্চল্যকর হত্যা বা বিস্ফোরনের মামলায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী থাকবে না, থাকলেও সাক্ষ্য দিবে না, এটাই স্বাভাবিক। বিস্ফোরনের ঘটনার বিষয়ে চাক্ষুস সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন নাই। কিন্তু, ঘটনার অব্যবহিত পরেই দু’জন স্থানীয় মানুষের সাক্ষ্য মামলাটির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের একজন রংমিস্ত্রি মিন্টু হাওলাদার, আরেকজন চা বিক্রেতা হাফিজুর রহমান। তারা হত্যাকা-ের কয়েকদিন পর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বেচ্ছায় জবানবন্দি প্রদাণ করেন। তারা অত্যন্ত সুনির্দিষ্টভাবে আসামিদের নাম উল্লেখ করেন, কিভাবে তাদের চেনেন-নাম জানেন এবং ঘটনার সময় সনাক্ত করেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন। তারা হত্যাকা-ের পর আসামিদের সম্পৃক্ত করে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে যে জবানবন্দি দিয়েছিলেন, ১৪-১৫ বছর পর আদালতে একই রূপ বক্তব্য প্রদাণ করেন। সাক্ষী মিন্টুকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা না করায় এবং হাফিজুর রহমানকে জেরার মাধ্যমে কোনো স্ববিরোধীতা প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের সাক্ষ্য সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য।
মামলার এজাহারকারী ও তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্য, অন্যান্য মৌখিক সাক্ষ্য ও পারিপার্শিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে আদালত মনে করেন-আসামিদের বিরুদ্ধে ১৯০৮ সালের বিস্ফোরক দ্রব্যাদি আইনের ৩ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দৈনিক জন্মভূমি পত্রিকা অফিসের সামনে শক্তিশালী বোমার বিস্ফারন ঘটিয়ে সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
আদালতের পর্যবেক্ষণ সূত্রে আরও জানা যায়, সাংবাদিক বালু হত্যাকা-ের একই সময়ে খুলনা মহানগর আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম, সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা, জনকন্ঠ পত্রিকার যশোরের সাংবাদিক শামসুর রহমান কেবল, সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক স.ম.আলাউদ্দিন, দৈনিক রানার পত্রিকার সম্পাদক মুকুল এবং খুলনার বামপন্থী রাজনৈতিক নেতা কমরেড রতন সেন সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মমভাবে নিহত হন। এরই ধারাবাহিকতায় নির্ভিক সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় প্রাণ হারান।
এদিকে, বৃহষ্পতিবার সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালুর ২০তম মৃত্যু বার্ষিকীতে হত্যাকান্ডের পুন:তদন্তসহ সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী আহবান করেছে খুলনার পেশাজীবী সাংবাদিক সুরক্ষা মঞ্চ। এছাড়া বালুর পরিবার, দৈনিক জন্মভুমি ও খুলনা প্রেসক্লাব বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করেছে। ##