১২:২১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুন্দরগঞ্জে ঘাঘট নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০ পরিবার

####

ভারি বর্ষণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ঘাঘট নদী ভাঙনের আতঙ্কে দক্ষিণ সাহাবাজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি পরিবার ও মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কারণে প্রকল্পের বাসিন্দারা চরম ঝুঁকি ও আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে এভাবে নদীভাঙন চললেও কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকা সংস্কার করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে প্রকল্পের ঘরবাড়িগুলো ও স্কুলটি। তাই এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষেরা। কখনো তীব্র স্রোত আর আছড়ে পড়া ঢেউয়ে পাড়ের মাটি খসে গ্রাস করছে এলাকা। কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ সাহাবাজ গুচ্ছগ্রামঘেঁষা ঘাঘট অশান্ত হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি পানি কমতে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন যেমন চোখে পড়ছে, তেমনি ভাঙনভীতিতে দিন কাটছে গুচ্ছগ্রামের মানুষজন। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের কয়েক শত মানুষ বসবাস করছে। বর্তমানে সেখানকার ৩০ পরিবার হুমকির মুখে রয়েছেন। নদীর ভাঙন রক্ষার পদক্ষেপ না নিলে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। যে কোনো মুহূর্তে গুচ্ছগ্রাম ও স্কুলটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নদীভাঙনকবলিত এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের কয়েক শ মানুষ বসবাস করছেন। একইভাবে সর্বানন্দ ইউনিয়ের ঘাঘট নদীর আশেপাশে বসবাসকারী কয়েক হাজার পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব পরিবার এক যুগ আগে থেকে বসবাস করে আসছে। নদীভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন চরম আকার ধারণ করায় সর্বানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে এবং স্থায়ী সংস্কারের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রকল্পের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমরা  ৩০ টি পরিবার এখানে বসবাস করি। ঘর ছিল না, এই ঘর পেয়ে খুব ভালো লাগছিল। ভাঙনের কারণে অধিকাংশ জায়গা নদীতে চলে গেছে। রাতে যখন জোয়ার আসে তখন খুব ভয় হয় এই বুঝি ঘর নদীতে চলে গেল। অনেকে ভয়ে রাতে অন্য জায়গায় চলে যায়।’ আরেক বাসিন্দা হালিম মিয়া বলেন, নদী থেকে আমাদের ঘর ৭০ থেকে ৮০ হাত দূরে ছিল। এক মাসের ভাঙনে নদী এখন ঘরের কাছে চলে এসেছে। রাতে খুব ভয় হয় কখন ঘর ভেঙে পড়ে। ঘর নদীতে চলে গেলে কোথায় থাকব আমরা।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর বন্যায় ভাঙন সৃষ্টি হলেও স্থায়ী ও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।  এখন যারা দক্ষিণ সাহাবাজ গুচ্ছগ্রামে আছে, তারাও ঘাঘটের ছোবলের কাছাকাছি। এভাবে ভাঙতে থাকলে আশ্রয়হীন ও সর্বস্বান্ত হবে অনেক পরিবার। প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নদীপাড়ে এমন বন্যা আর ভাঙন হয় জানিয়ে গুচ্ছগ্রামের যুবক মোনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয় না। আমরা কষ্টে থাকি। প্রতিবছর ভাঙনের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের গুচ্ছগ্রামটি রক্ষা করতে জিও ব্যাগ ও টেকসই ব্লকের ব্যবস্থা সরকার করে দেন । আমরা নিরাপদে এখানে থাকতে চাই।

এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম। এ সময় ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অবগত করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

মোংলায় জোরপূর্বক ক্রয়কৃত জমি দখলের অভিযোগ

সুন্দরগঞ্জে ঘাঘট নদীর ভাঙনের ঝুঁকিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০ পরিবার

প্রকাশিত সময় : ০৫:১২:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

####

ভারি বর্ষণে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ঘাঘট নদী ভাঙনের আতঙ্কে দক্ষিণ সাহাবাজ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি পরিবার ও মধ্য সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ কারণে প্রকল্পের বাসিন্দারা চরম ঝুঁকি ও আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের অভিযোগ, প্রায় এক মাস ধরে এভাবে নদীভাঙন চললেও কর্তৃপক্ষ তেমন কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এদিকে ভাঙন কবলিত এলাকা সংস্কার করা না হলে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে প্রকল্পের ঘরবাড়িগুলো ও স্কুলটি। তাই এ নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষেরা। কখনো তীব্র স্রোত আর আছড়ে পড়া ঢেউয়ে পাড়ের মাটি খসে গ্রাস করছে এলাকা। কয়েক দিন ধরে দক্ষিণ সাহাবাজ গুচ্ছগ্রামঘেঁষা ঘাঘট অশান্ত হয়ে উঠেছে। বৃষ্টি পানি কমতে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন যেমন চোখে পড়ছে, তেমনি ভাঙনভীতিতে দিন কাটছে গুচ্ছগ্রামের মানুষজন। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের কয়েক শত মানুষ বসবাস করছে। বর্তমানে সেখানকার ৩০ পরিবার হুমকির মুখে রয়েছেন। নদীর ভাঙন রক্ষার পদক্ষেপ না নিলে এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দ্রুতই নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন দিন কাটাচ্ছেন সেখানকার বাসিন্দারা। যে কোনো মুহূর্তে গুচ্ছগ্রাম ও স্কুলটি নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। নদীভাঙনকবলিত এ আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৩০টি ভূমিহীন পরিবারের কয়েক শ মানুষ বসবাস করছেন। একইভাবে সর্বানন্দ ইউনিয়ের ঘাঘট নদীর আশেপাশে বসবাসকারী কয়েক হাজার পরিবার নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। এসব পরিবার এক যুগ আগে থেকে বসবাস করে আসছে। নদীভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় কয়েক হাজার মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন চরম আকার ধারণ করায় সর্বানন্দ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে এবং স্থায়ী সংস্কারের জন্য সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানিয়েছেন। প্রকল্পের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমরা  ৩০ টি পরিবার এখানে বসবাস করি। ঘর ছিল না, এই ঘর পেয়ে খুব ভালো লাগছিল। ভাঙনের কারণে অধিকাংশ জায়গা নদীতে চলে গেছে। রাতে যখন জোয়ার আসে তখন খুব ভয় হয় এই বুঝি ঘর নদীতে চলে গেল। অনেকে ভয়ে রাতে অন্য জায়গায় চলে যায়।’ আরেক বাসিন্দা হালিম মিয়া বলেন, নদী থেকে আমাদের ঘর ৭০ থেকে ৮০ হাত দূরে ছিল। এক মাসের ভাঙনে নদী এখন ঘরের কাছে চলে এসেছে। রাতে খুব ভয় হয় কখন ঘর ভেঙে পড়ে। ঘর নদীতে চলে গেলে কোথায় থাকব আমরা।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর বন্যায় ভাঙন সৃষ্টি হলেও স্থায়ী ও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না পানি উন্নয়ন বোর্ড।  এখন যারা দক্ষিণ সাহাবাজ গুচ্ছগ্রামে আছে, তারাও ঘাঘটের ছোবলের কাছাকাছি। এভাবে ভাঙতে থাকলে আশ্রয়হীন ও সর্বস্বান্ত হবে অনেক পরিবার। প্রতিবছর আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে নদীপাড়ে এমন বন্যা আর ভাঙন হয় জানিয়ে গুচ্ছগ্রামের যুবক মোনারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কথায় কেউ গুরুত্ব দেয় না। আমরা কষ্টে থাকি। প্রতিবছর ভাঙনের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আমাদের গুচ্ছগ্রামটি রক্ষা করতে জিও ব্যাগ ও টেকসই ব্লকের ব্যবস্থা সরকার করে দেন । আমরা নিরাপদে এখানে থাকতে চাই।

এদিকে ভাঙনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সর্বানন্দ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জহুরুল ইসলাম। এ সময় ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা অবগত করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজির হোসেনের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তাঁকে পাওয়া যায়নি।