১০:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
খুলনার ৬টি আসনের হিসাব-নিকাশ :

৩টিতে স্বস্তিতে নৌকা, ৩টিতে বিএনপি-জামায়াতের ভোটই জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর

  • ।। সুনীল দাস ।।
  • প্রকাশিত সময় : ০৮:২৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৪৮ পড়েছেন

####

খুলনায় ভোট গ্রহনের সবরকম প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ৬টি আসনেই ইতিমধ্যেই প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। রাত পোহালেই ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এখন চলছে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। জেলার ৬টি আসনেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ। তবে এরমধ্যে খুলনা-১, ২ ও ৩নং আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী অনেকটাই নিরভার। তবে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে খুলনা-২ আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে একদম ফুরফুরে মেজাজে আছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। আর ১ ও ৩ আসনে ঈগল প্রতীকের দুই প্রার্থীর একজন সাবেক সচিব ও আরেকজন আওয়ামী লীগের নেত্রী হলেও তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি। অন্যদিকে, খুলনা-৪, ৫ ও ৬নং আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় অস্বস্তিতে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। এরম্যেধ খুলনা-৪,৫ ও ৬ আসনে ভোট বর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াতের একটি বিপুল সংখ্যক ভোটার রয়েছে। যারা জয়-পরাজয়ে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। সেজন্য এ আসনগুলোর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের ভোট টানতে চেষ্টায় রয়েছেন। যদিও ভোট বর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যেতে নির্দেশনা রয়েছে। এরমধ্যে ৪ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগ হওয়ায় হাপিত্যেশ উঠে গেছে। বেকায়দায় থাকা এখনকার দুই প্রার্থী হেরে বসলেও অসম্ভব কিছু হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। খুলনার ৬টি আসনে মোট ভোটার রয়েছে ১৯,৯৯৮৮২জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১০০০০৮৪ জন, মহিলা ভোটার ৯৯৯৭৮৪ জন ও ১৪জন হিজড়া ভোটার। তাদের ভোটে ০৭জানুয়ারী প্রার্থীদের জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে।

খুলনা-১ আসন দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে নৌকার মাঝি সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়। তিনিও ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠ কাপালেও তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি বলে ভোটাররা দাবি করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদ লাঙল, তৃণমূল বিএনপি’র গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে রয়েছেন। খুলনা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৯০,২৬৫জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪৪৫৬৭ জন ও মহিলা ভোটার  ১৪৫৬৯৮ জন এবং ১১০টি কেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৭০টি।

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে ছয়জন বেশ আমেজে আছেন নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের মেঝো ছেলে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তার প্রধান শ্রোগান উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। এ আসনের জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম লাঙল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার ডাব, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) বাবু কুমার রায় ছড়ি প্রতিক, বিএনএম প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন নোঙর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান ঈগল প্রতিক নিয়ে মাঠে সরব না থাকায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো তিন এমপি হবেন বলেও সমর্থকরা অনেকটাই নিশ্চিত। খুলনা-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৩২০২১৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১৫৯২৭০ জন, মহিলা ভোটার ১৬০৯৪১ জন ও ৮জন হিজড়া ভোটার এবং ১৫৭টি কেন্দ্রে বুথ রয়েছে  ৮৪৫টি।

খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনে প্রথম বারের আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।  সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন সবার থেকে। প্রচারনার শুরুতে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থক নেতাকর্মীদের কিচুটা বিরোধীতা থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছেন নৌকার এসএম.কামাল। এই আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন। খুলনা-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ২৪৫৭১০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১২৪৪৫৭ জন , মহিলা ভোটার  ১২১২৪৯ জন ও ৪জন হিজড়া ভোটার এবং কেন্দ্র রয়েছে ১১৬টি ও বুথ রয়েছে ৬৩৩টি।

খুলনা-৪ আসন রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নিয়ে গঠিত। এখানে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদী। আওয়ামী রাজনীতির সাথে তিনি ও তার পরিবারের আগের সম্পর্ক প্রায় শূন্যের কোঠায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি নানাভাবে অতি সহজে জয় পেয়েছিলেন। এবার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‍মুখে পড়েছেন। এই আসনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতিক নিয়ে এস এম মোর্তজা রশিদী দারা। যিনি এই আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রয়াত: এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার সহোদর। সুজার অকাল মৃত্যুর পর সালাম মূর্শেদী এ আসনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। আর দারা আপাদমস্তক আওয়ামী পরিবারের গর্বিত সদস্য। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। অপরদিকে, নৌকার সালাম মূর্শেদীর নামে অভিযোগ পাহাড়সম। এমপি হয়ে ব্যবসার কাজে ঢাকায় অবস্থান, এলাকার ভোটারদের গুরুত্ব না দেয়া, অন্য নেতাদের ছিড়ে ফেলা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুদান নিজের ও স্ত্রীর সংগঠনের নামে চালানো, ত্যাগী নেতাদের এড়িয়ে চলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগিএরাকার সাধারন মানুষের। এছাড়া গেল সপ্তাহেই নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্ষমাও চেয়ে মাফ পেয়েছেন তিনি। তাই ভোটাররা যদি সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ পায় তাহলে তিনি বিজিত হলে অবাক হওয়ার মতো কিছুই থাকবে না-ওই আসনের ভোটাররা এসব কথা বলেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ লাঙল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আম, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান সোনালী আঁশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনিরা সুলতানা ডাব, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান মিনার, বিএনএম প্রার্থী এস.এম আজমল হোসেন নোঙর, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা ট্রাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী এমডি এহসানুল হক সোফা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজভী আলম ঈগল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। খুলনা-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৩৫৫১৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১৭৭২৯২ জন , মহিলা ভোটার  ১৭৭৮৬০ জন ও ১জন হিজড়া ভোটার এবং ১৩৩টি কেন্দ্র ও বুথ রয়েছে ৬০৫টি।

এছাড়া ডুমুরিয়া ফুলতলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচারনায় উত্তাপ ছড়িয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বার বার নির্বাচিত এমপি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতিকের ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। একই রাজনৈতিক মতাদর্শের দুই প্রার্থীই বিজয়ী হতে তৎপরতা দেখিয়েছেন সাধ্য মত। দুজনের প্রচার-প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে পাল্রা ভারি নৌকা প্রতিকের দিকেই। এ আসনে জাতীয় পাটির মো. শাহীদ আলম লাঙ্গল ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার স্বপন হাতুড়ি প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। খুলনা-৫ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৮৩২১৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯০৪৪৯ জন, মহিলা ভোটার  ১৯২৭৭০ জন এবং কেন্দ্র ১৩৫টি ও ৮৪৫টি বুথ রয়েছে।

পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬ আসন। এই আসনে নৌকার মাঝি হয়েছে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ত্যাগী নেতা মোঃ রশীদুজ্জামান। তার শক্ত প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহাবুবুল আলম ঈগল প্রতিক নিয়ে। এ আসনের দুই উপজেরাতেই আওয়ামীলীগের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব ও বিরোধের কারনে এবং বর্তমান এমপি মো: আকতারুজ্জামান বাবু ও কয়রা উপজেরা চেয়ারম্যান এসএম. মফিকুল ইসরামের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নৌকার বিপক্সে প্রচারনা চালিয়েছেন বরে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে দুই উপজেলার কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঈগলের পক্ষে কাজ করেছেন। সে কারনে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের হিসাব নিকাশ বদলে যেতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় অনেকেই। এ আসনে এছাড়াও বিএনএমের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, জাতীয় পার্টির শফিকুল আলম মধু, এনপিপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম, জাকের পার্টি মনোনীত শেখ মর্তুজা আল মামুন ও তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদির উদ্দিন রয়েছেন। খুলনা-৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৪০৫৩১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ২০৪০৪৯ জন, মহিলা ভোটার  ২০১২৬৬ জন ও মাত্র ১জন হিজড়া ভোটার এবং কেন্দ্র ১৪২টি ও ৯২২টি বুথ রয়েছে। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik Madhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

খুলনার ৬টি আসনের হিসাব-নিকাশ :

৩টিতে স্বস্তিতে নৌকা, ৩টিতে বিএনপি-জামায়াতের ভোটই জয়-পরাজয়ে ফ্যাক্টর

প্রকাশিত সময় : ০৮:২৫:০৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ জানুয়ারী ২০২৪

####

খুলনায় ভোট গ্রহনের সবরকম প্রস্তুতি শেষ করেছে প্রশাসন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা। ৬টি আসনেই ইতিমধ্যেই প্রচার-প্রচারণা শেষ হয়েছে। রাত পোহালেই ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এখন চলছে জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ। জেলার ৬টি আসনেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিজয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চায় আওয়ামীলীগ। তবে এরমধ্যে খুলনা-১, ২ ও ৩নং আসনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী অনেকটাই নিরভার। তবে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে খুলনা-২ আসনে ছয় প্রার্থীর মধ্যে একদম ফুরফুরে মেজাজে আছেন বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। আর ১ ও ৩ আসনে ঈগল প্রতীকের দুই প্রার্থীর একজন সাবেক সচিব ও আরেকজন আওয়ামী লীগের নেত্রী হলেও তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে পারেনি। অন্যদিকে, খুলনা-৪, ৫ ও ৬নং আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় অস্বস্তিতে আছেন নৌকার প্রার্থীরা। এরম্যেধ খুলনা-৪,৫ ও ৬ আসনে ভোট বর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াতের একটি বিপুল সংখ্যক ভোটার রয়েছে। যারা জয়-পরাজয়ে বিশেষ ভুমিকা রাখতে পারে। সেজন্য এ আসনগুলোর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বিএনপি-জামায়াতের ভোট টানতে চেষ্টায় রয়েছেন। যদিও ভোট বর্জনকারী বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে না যেতে নির্দেশনা রয়েছে। এরমধ্যে ৪ ও ৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামীলীগ হওয়ায় হাপিত্যেশ উঠে গেছে। বেকায়দায় থাকা এখনকার দুই প্রার্থী হেরে বসলেও অসম্ভব কিছু হবে না বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা। খুলনার ৬টি আসনে মোট ভোটার রয়েছে ১৯,৯৯৮৮২জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১০০০০৮৪ জন, মহিলা ভোটার ৯৯৯৭৮৪ জন ও ১৪জন হিজড়া ভোটার। তাদের ভোটে ০৭জানুয়ারী প্রার্থীদের জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে।

খুলনা-১ আসন দাকোপ ও বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে নৌকার মাঝি সাবেক এমপি ননী গোপাল মণ্ডল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায়। তিনিও ঈগল প্রতীক নিয়ে মাঠ কাপালেও তেমন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি বলে ভোটাররা দাবি করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী হাসানুর রশিদ লাঙল, তৃণমূল বিএনপি’র গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে রয়েছেন। খুলনা-১ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৯০,২৬৫জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৪৪৫৬৭ জন ও মহিলা ভোটার  ১৪৫৬৯৮ জন এবং ১১০টি কেন্দ্রে বুথ রয়েছে ৬৭০টি।

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা) আসনে ছয়জন বেশ আমেজে আছেন নৌকার প্রার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের মেঝো ছেলে সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল। তার প্রধান শ্রোগান উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। এ আসনের জাতীয় পার্টির মো. গাউসুল আজম লাঙল, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দেবদাস সরকার ডাব, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট) বাবু কুমার রায় ছড়ি প্রতিক, বিএনএম প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল আমিন নোঙর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. সাঈদুর রহমান ঈগল প্রতিক নিয়ে মাঠে সরব না থাকায় টানা দ্বিতীয়বারের মতো তিন এমপি হবেন বলেও সমর্থকরা অনেকটাই নিশ্চিত। খুলনা-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৩২০২১৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১৫৯২৭০ জন, মহিলা ভোটার ১৬০৯৪১ জন ও ৮জন হিজড়া ভোটার এবং ১৫৭টি কেন্দ্রে বুথ রয়েছে  ৮৪৫টি।

খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী) আসনে প্রথম বারের আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।  সাংগঠনিক দক্ষতায় তিনি এগিয়ে রয়েছেন সবার থেকে। প্রচারনার শুরুতে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সমর্থক নেতাকর্মীদের কিচুটা বিরোধীতা থাকলেও তা ক্রমান্বয়ে কাটিয়ে উঠেছেন নৌকার এসএম.কামাল। এই আসনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেত্রী ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাতেমা জামান সাথী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও জাকের পার্টির প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন। খুলনা-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ২৪৫৭১০ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১২৪৪৫৭ জন , মহিলা ভোটার  ১২১২৪৯ জন ও ৪জন হিজড়া ভোটার এবং কেন্দ্র রয়েছে ১১৬টি ও বুথ রয়েছে ৬৩৩টি।

খুলনা-৪ আসন রূপসা, তেরখাদা ও দিঘলিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত নিয়ে গঠিত। এখানে তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়েছেন ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মূর্শেদী। আওয়ামী রাজনীতির সাথে তিনি ও তার পরিবারের আগের সম্পর্ক প্রায় শূন্যের কোঠায়। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি নানাভাবে অতি সহজে জয় পেয়েছিলেন। এবার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‍মুখে পড়েছেন। এই আসনে ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কেটলি প্রতিক নিয়ে এস এম মোর্তজা রশিদী দারা। যিনি এই আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক প্রয়াত: এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার সহোদর। সুজার অকাল মৃত্যুর পর সালাম মূর্শেদী এ আসনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন। আর দারা আপাদমস্তক আওয়ামী পরিবারের গর্বিত সদস্য। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন গুরুতপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। অপরদিকে, নৌকার সালাম মূর্শেদীর নামে অভিযোগ পাহাড়সম। এমপি হয়ে ব্যবসার কাজে ঢাকায় অবস্থান, এলাকার ভোটারদের গুরুত্ব না দেয়া, অন্য নেতাদের ছিড়ে ফেলা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুদান নিজের ও স্ত্রীর সংগঠনের নামে চালানো, ত্যাগী নেতাদের এড়িয়ে চলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ধরনের নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগিএরাকার সাধারন মানুষের। এছাড়া গেল সপ্তাহেই নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে আদালতে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ক্ষমাও চেয়ে মাফ পেয়েছেন তিনি। তাই ভোটাররা যদি সঠিকভাবে ভোট প্রয়োগ করার সুযোগ পায় তাহলে তিনি বিজিত হলে অবাক হওয়ার মতো কিছুই থাকবে না-ওই আসনের ভোটাররা এসব কথা বলেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির মো. ফরহাদ আহমেদ লাঙল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির(এনপিপি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান আম, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান সোনালী আঁশ, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনিরা সুলতানা ডাব, ইসলামী ঐক্যজোটের রিয়াজ উদ্দীন খান মিনার, বিএনএম প্রার্থী এস.এম আজমল হোসেন নোঙর, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. জুয়েল রানা ট্রাক, স্বতন্ত্র প্রার্থী এমডি এহসানুল হক সোফা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. রেজভী আলম ঈগল প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। খুলনা-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৩৫৫১৫৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ১৭৭২৯২ জন , মহিলা ভোটার  ১৭৭৮৬০ জন ও ১জন হিজড়া ভোটার এবং ১৩৩টি কেন্দ্র ও বুথ রয়েছে ৬০৫টি।

এছাড়া ডুমুরিয়া ফুলতলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রচারনায় উত্তাপ ছড়িয়েছেন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বার বার নির্বাচিত এমপি সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ঈগল প্রতিকের ফুলতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের উপজেলা শাখার সভাপতি শেখ আকরাম হোসেন। একই রাজনৈতিক মতাদর্শের দুই প্রার্থীই বিজয়ী হতে তৎপরতা দেখিয়েছেন সাধ্য মত। দুজনের প্রচার-প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে অংশ নিয়েছেন। তবে পাল্রা ভারি নৌকা প্রতিকের দিকেই। এ আসনে জাতীয় পাটির মো. শাহীদ আলম লাঙ্গল ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ সেলিম আকতার স্বপন হাতুড়ি প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। খুলনা-৫ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩৮৩২১৯ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ১৯০৪৪৯ জন, মহিলা ভোটার  ১৯২৭৭০ জন এবং কেন্দ্র ১৩৫টি ও ৮৪৫টি বুথ রয়েছে।

পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলা নিয়ে খুলনা-৬ আসন। এই আসনে নৌকার মাঝি হয়েছে সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ত্যাগী নেতা মোঃ রশীদুজ্জামান। তার শক্ত প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জি এম মাহাবুবুল আলম ঈগল প্রতিক নিয়ে। এ আসনের দুই উপজেরাতেই আওয়ামীলীগের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব ও বিরোধের কারনে এবং বর্তমান এমপি মো: আকতারুজ্জামান বাবু ও কয়রা উপজেরা চেয়ারম্যান এসএম. মফিকুল ইসরামের নেতৃত্বে একটি গ্রুপ নৌকার বিপক্সে প্রচারনা চালিয়েছেন বরে অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে দুই উপজেলার কয়েকজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ঈগলের পক্ষে কাজ করেছেন। সে কারনে নৌকার প্রার্থীর বিজয়ের হিসাব নিকাশ বদলে যেতে পারে বলে মনে করেন স্থানীয় অনেকেই। এ আসনে এছাড়াও বিএনএমের মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার এস এম নেওয়াজ মোরশেদ, জাতীয় পার্টির শফিকুল আলম মধু, এনপিপি মনোনীত প্রার্থী মো. আবু সুফিয়ান, বাংলাদেশ কংগ্রেস মনোনীত প্রার্থী মির্জা গোলাম আজম, জাকের পার্টি মনোনীত শেখ মর্তুজা আল মামুন ও তৃণমূল বিএনপির গাজী নাদির উদ্দিন রয়েছেন। খুলনা-৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা  ৪০৫৩১৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার  ২০৪০৪৯ জন, মহিলা ভোটার  ২০১২৬৬ জন ও মাত্র ১জন হিজড়া ভোটার এবং কেন্দ্র ১৪২টি ও ৯২২টি বুথ রয়েছে। ##