০৭:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এ নির্বাচন আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্রের পক্ষেও আগ্রহভাবে দেখা হচ্ছে

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধ পরিকর: সিইসি হাবিবুল আউয়াল

###     প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা মাঠ পার্যায়ে ও কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি দিয়ে নির্বাচন মনিটর করবো। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অনিয়ম পাওয়ায় একটি জাতীয় সংসদের নির্বাচনও সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। এরপর অনেক সিরিয়াস ইম্প্যাক্ট হয়েছে।গাজীপুরেও অভিযোগ ও প্রমান পেয়ে একাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। খুলনায় এখনও দেখতে পাচ্ছি না কোন অনিয়ম হয়েছে। কোন অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না। আমরা সিটি র্বাচন কিন্তু শুধুমাত্র দেশীয় পারস্পেক্টে দেখছি না। এ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও আগ্রহ ভাবে দেখা হচ্ছে। সরকারও এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সিটি করপোরেশন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য করতে। আগামী ১২জুন খুলনা সিটির যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটিও সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হবে। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা শিল্পকরা একাডেমী মিলনায়তনে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধ পরিকর।সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্বটা হোক সেটা সীমিত তারপরেও আমরা নিশ্চিত করবে চায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসবে। তাদেরকে নির্বিঘ্নে আসতে দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে ভোট দিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কোন দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবে বা দেবে না সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। এ ক্সেত্রে যদি কোন ব্যাত্যয় ঘটে তবে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এছাড়া সকল প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং বা সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরী করা হবে। এজন্য পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, ম্যজিষ্ট্রেটবৃন্দ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, বিজিবির সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসব মুখর হতে হবে। এখানে সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করবেন না। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রমাসন, বিভাগীয় প্রশান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেউ কোন পক্ষপাতমূলক আচরন ও কর্মকান্ড করবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। যদি কেউ পাক্ষপাতিত্ব করার প্রমান পাওয়া যায় তবে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই ইভিএমে ভোট নিয়ে মনগড়া ও আজগুবি কথা বলছেন। এটি এমন আধুনিক ব্যবস্থা যে ভোটার ছাড়া অন্য কেউই আরেকজনের ভোট দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারন আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটারের সব তথ্যই দেখা যাবে। তারপরই সে ভোট দিতে পারবে।  তাছাড়া ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে তার ফলাফল কোনভাবেই পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। মেশিনের মাধ্যমে যে ফলাফল প্রিন্ট হবে সেটিও সবাই সেন্টারে বসেই দেখবেন। ইভিএম বিষয়ে কমিশন সবগুলো কেন্দ্রেই একাধিক স্থানে সাধারন ভোটারদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে। এ বিষয়ে ভিতির কোন বিষয় নেই। গাজীপুর ও রংপুরে এসব প্রমানিত হয়েছে। তিনি এসব বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে  সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করতে প্রার্থীদের প্রতিও তিনি আহবান জানান।

মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক অভিযোগ করেন, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনায় অনিয়মের মাত্রা বেড়ে গেছে। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অফিস রয়েছে প্রভাব করছে। তিনি নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত দেয়ার জন্য আহবান জানান। জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী সাব্বির হোসেন প্রচার-প্রচারনায় কোন বাধা পাননি জানিয়ে ইভিএম বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে দেখানোর ব্যভস্তা গ্রহনের দাভী জানান। আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র তালুকদার খালেক বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলেছেন বৃষ্টিপাতে পোষ্টার নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তিনি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রত্যেকটা প্রার্থীর প্রতিটা বুথে এজেন্ট থাকার ব্যবস্তা এবং ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের বিষয়ে নজর দেয়া ও যেসব বোটার কাজের তাগিদে বাইরে রেয়ছে তাদেরকে ভোট দিতে আসতে পারে তার দাবী জানান। একই সাথে তিনি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্টানে তার ও দলের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী  শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, সিটি নির্বাচনে কেন ইভিএমে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলে কি ব্যবস্থা নেবেন সে বিষয়ে জানতে চান। এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেন এবং প্রচার-প্রচারনায় ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে পুলিশ যেন ভোটারদের বাধা না দেয় সে ব্যবস্থা নেয়া ও  সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের দাবী জানান। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আ: আওয়াল বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা আমাদেরকে শংকিত করে। বোটের দিন যেন কেন্দ্রে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটারদের বের করে দেয়া না হয় ও ইভিএমে বিভ্রাট না হয় সে বিষয়ে কমিশনকে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

উন্মুক্ত মতবিনিময় পর্বে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানান অভিযোগ ‍তুলে ধরেন। এরমধ্যে ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রাথী রফিকুল আলম ও মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর একাধিক অফিস ও হাজারো মানুষ নামিয়ে কাজ করছে। ২৭নং ওয়ার্ড-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান বাইরে অবস্তানরত ভোটারদেরকে পোষ্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের দাভী জানান। ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইমরান হোসেন মিয়া ফলাফল তাৎক্ষনিক দেয়ার দাবী করেন। ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী অভিযোগ করেন সবল প্রার্থীরা অন্যদের উপর চাপ দিচ্ছে। ১৭নং ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী হাফিজুর রহমান প্রতিবন্দ্বি ও বৃদ্ধদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা,র দাবী জানান। ১৫নং ওয়ার্ড হাফিজুর রহমান সুমন অভিযোগ করেন প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ ও নির্বাচন অফিসে অভিযোগের পরেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তিনি। ১৬নং ওয়ার্ড আনিসুর রহমান বিশ্বাস ভোটের দিন সাধারণ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা, ১৫নং ওয়ার্ড আমিনুল ইসলাম মুন্না ও ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবু সায়েম ভুয়া ভোট না দিতে পারে সে বিষয়ে তদারকি রাখা, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আশফাকুর রহমান কাকন বহিরাগতরা ক্যাম্পেইন ও শোডাউন করতে পারবে কিনা জানতে চান। ০৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করে নেয়া হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটি আচরনবিধি ভঙ্গ কিনা ও ব্যবস্তা নেয়ার দাবী জানান। ০৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সাজ্জাত হোসেন তোতন প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ ভাড়া করে প্রচার-প্রচারণা করছে। টাকা দিয়ে ভোট করার জন্য চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ০৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পিকু ইভিএমে শূন্য ভোট দেখিয়ে ভোট শুরুর দাবী করেন। ০১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুর রহমান স্বপন বলেন একাধিক অফিস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মীর লিটন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর অফিস, কর্মচারী ব্যবহার ও বিভিন্ন ভাতা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। ০৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফ হেসেন নির্বাচনী ব্যয় ১লাখের বেশী করছে। টাকা দিয়ে নারী পুরুষকে এনে ভোটের ক্যাম্পেইন করছে কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না।২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বাদশা হাওলাদার অবিযোগ করেন তাকে হুমকি দিচ্ছে বর্তমান কাউন্সিলর গাউসুল আজম।  ০৩নং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সিডিসির সদস্যদেরকে নির্বাচনের কাজে লাগানো হচ্ছে। ০৫নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও ০৭নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাবিয়া ইয়াসমিন আঙ্গুরা বুথে এজেন্ট দিতে না পারলে ভোটের ফলাফল পাওয়ার উপায় কি জানতে চান। ০৮নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হালিমা ইসলাম, ১০নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মিনতি রায় অভিযোগ করেন সিডিসি দিয়ে প্রভাবিত করছে এবং ভয়ভীতি দিচ্ছে। প্রধান অতিথি মেয়র, কাউন্সিলর র্থীদের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেন।

উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে আসা বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রশ্নের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের বক্তব্যে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনা ও প্রচারনা করা। এগুলোর প্রমান পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশন যেমন কঠোর ব্যবস্তা নেবে। তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সাধারন মানুষকে এ অনৈতিক কর্মকান্ড ও অপকর্ম প্রতিহতে অহিংস উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি প্রতিটি প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রের বুথে নিজেদের পোলিং এজেন্ট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, যদি কেউ বুথে এজেন্ট না দেন তবে তার দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। বুথে পোলিং এজেন্ট নেই বা তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে মিডিয়ার কাছে এ ধরনের অভিযোগ না আসে সেজন্য কমিশনকে সহযোগীতার আহবান জানান তিনি।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আহসান হাবিব খান ও নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কেএমপি কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁঞা, ডিআইজি মো: মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, পুলিশ সুপার মো: মাহবুব হাসান, রিটার্নিং অফিসার মো: আলাউদ্দিন, জেলা নির্বাচন অফিসার ফারাজী বেনজীর আহমেদ প্রমুখ। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ##

Tag :
লেখক তথ্য সম্পর্কে

Dainik adhumati

জনপ্রিয়

কোস্টগার্ডের অভিযানে অস্ত্রসহ আটক -১ 

এ নির্বাচন আর্ন্তজাতিক সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্রের পক্ষেও আগ্রহভাবে দেখা হচ্ছে

অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধ পরিকর: সিইসি হাবিবুল আউয়াল

প্রকাশিত সময় : ০৮:৩২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ মে ২০২৩

###     প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা মাঠ পার্যায়ে ও কেন্দ্রীয়ভাবে সিসিটিভি দিয়ে নির্বাচন মনিটর করবো। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে অনিয়ম পাওয়ায় একটি জাতীয় সংসদের নির্বাচনও সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে। এরপর অনেক সিরিয়াস ইম্প্যাক্ট হয়েছে।গাজীপুরেও অভিযোগ ও প্রমান পেয়ে একাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। খুলনায় এখনও দেখতে পাচ্ছি না কোন অনিয়ম হয়েছে। কোন অনিয়ম করে পার পাওয়া যাবে না। আমরা সিটি র্বাচন কিন্তু শুধুমাত্র দেশীয় পারস্পেক্টে দেখছি না। এ নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে জাতিসংঘ, ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা ও রাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও আগ্রহ ভাবে দেখা হচ্ছে। সরকারও এটাকে সাধুবাদ জানিয়েছে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সিটি করপোরেশন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য করতে। আগামী ১২জুন খুলনা সিটির যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটিও সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য হবে। মঙ্গলবার দুপুরে খুলনা শিল্পকরা একাডেমী মিলনায়তনে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধ পরিকর।সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের মূল দায়িত্বটা হোক সেটা সীমিত তারপরেও আমরা নিশ্চিত করবে চায় ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসবে। তাদেরকে নির্বিঘ্নে আসতে দিতে হবে এবং স্বাধীনভাবে ভোট দিতে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। কোন দল বা প্রার্থীকে ভোট দেবে বা দেবে না সেটা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। এ ক্সেত্রে যদি কোন ব্যাত্যয় ঘটে তবে কমিশন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে। এছাড়া সকল প্রার্থীদের জন্য লেভেল প্লেয়িং বা সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরী করা হবে। এজন্য পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, ম্যজিষ্ট্রেটবৃন্দ, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি, বিজিবির সমন্বিত উদ্যোগ রয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও উৎসব মুখর হতে হবে। এখানে সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্পষ্ট নির্দেশনা কোন রকম পক্ষপাতিত্ব করবেন না। নির্বাচনের দায়িত্বে নিয়োজিত জেলা প্রমাসন, বিভাগীয় প্রশান ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কেউ কোন পক্ষপাতমূলক আচরন ও কর্মকান্ড করবেন না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। যদি কেউ পাক্ষপাতিত্ব করার প্রমান পাওয়া যায় তবে তাদেরকেও ছাড় দেয়া হবে না।

তিনি বলেন, সিটি নির্বাচন ইভিএমে অনুষ্ঠিত হবে। অনেকেই ইভিএমে ভোট নিয়ে মনগড়া ও আজগুবি কথা বলছেন। এটি এমন আধুনিক ব্যবস্থা যে ভোটার ছাড়া অন্য কেউই আরেকজনের ভোট দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারন আঙ্গুলের ছাপের মাধ্যমে ভোটারের সব তথ্যই দেখা যাবে। তারপরই সে ভোট দিতে পারবে।  তাছাড়া ইভিএমের মাধ্যমে ভোট হলে তার ফলাফল কোনভাবেই পরিবর্তন কেউ করতে পারবে না। মেশিনের মাধ্যমে যে ফলাফল প্রিন্ট হবে সেটিও সবাই সেন্টারে বসেই দেখবেন। ইভিএম বিষয়ে কমিশন সবগুলো কেন্দ্রেই একাধিক স্থানে সাধারন ভোটারদেরকে প্রশিক্ষণ দেবে। এ বিষয়ে ভিতির কোন বিষয় নেই। গাজীপুর ও রংপুরে এসব প্রমানিত হয়েছে। তিনি এসব বিভ্রান্তি না ছড়িয়ে  সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কমিশনকে তথ্য দিয়ে ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করতে প্রার্থীদের প্রতিও তিনি আহবান জানান।

মতবিনিময় সভায় উন্মুক্ত প্রশ্নোত্তর পর্বে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক অভিযোগ করেন, নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনায় অনিয়মের মাত্রা বেড়ে গেছে। আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ অফিস রয়েছে প্রভাব করছে। তিনি নির্বাচনের ফলাফল দ্রুত দেয়ার জন্য আহবান জানান। জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী সাব্বির হোসেন প্রচার-প্রচারনায় কোন বাধা পাননি জানিয়ে ইভিএম বিষয়ে প্রত্যক্ষভাবে দেখানোর ব্যভস্তা গ্রহনের দাভী জানান। আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী ও সাবেক মেয়র তালুকদার খালেক বলেন, কাউন্সিলর প্রার্থীরা বলেছেন বৃষ্টিপাতে পোষ্টার নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। তিনি মেয়র ও কাউন্সিলর প্রত্যেকটা প্রার্থীর প্রতিটা বুথে এজেন্ট থাকার ব্যবস্তা এবং ইভিএমে সুষ্ঠুভাবে ভোট প্রদানের বিষয়ে নজর দেয়া ও যেসব বোটার কাজের তাগিদে বাইরে রেয়ছে তাদেরকে ভোট দিতে আসতে পারে তার দাবী জানান। একই সাথে তিনি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্টানে তার ও দলের পক্ষ থেকে সহায়তার আশ্বাস দেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী  শফিকুল ইসলাম মধু বলেন, সিটি নির্বাচনে কেন ইভিএমে ব্যবহার হচ্ছে। সরকারী কর্মকর্তারা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করলে কি ব্যবস্থা নেবেন সে বিষয়ে জানতে চান। এছাড়া নির্বাচনী ব্যয় বাড়ানোর তাগিদ দেন এবং প্রচার-প্রচারনায় ও ভোটারদের কেন্দ্রে আসা-যাওয়ার পথে পুলিশ যেন ভোটারদের বাধা না দেয় সে ব্যবস্থা নেয়া ও  সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের দাবী জানান। ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী আ: আওয়াল বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে যেসব ঘটনা ঘটেছে তা আমাদেরকে শংকিত করে। বোটের দিন যেন কেন্দ্রে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ভোটারদের বের করে দেয়া না হয় ও ইভিএমে বিভ্রাট না হয় সে বিষয়ে কমিশনকে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।

উন্মুক্ত মতবিনিময় পর্বে কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানান অভিযোগ ‍তুলে ধরেন। এরমধ্যে ৩১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রাথী রফিকুল আলম ও মো: নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান কাউন্সিলর একাধিক অফিস ও হাজারো মানুষ নামিয়ে কাজ করছে। ২৭নং ওয়ার্ড-এর স্বতন্ত্র প্রার্থী হাফিজুর রহমান বাইরে অবস্তানরত ভোটারদেরকে পোষ্টাল ব্যালটে ভোট প্রদানের দাভী জানান। ২৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইমরান হোসেন মিয়া ফলাফল তাৎক্ষনিক দেয়ার দাবী করেন। ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী অভিযোগ করেন সবল প্রার্থীরা অন্যদের উপর চাপ দিচ্ছে। ১৭নং ওয়ার্ডের অপর কাউন্সিলর প্রার্থী হাফিজুর রহমান প্রতিবন্দ্বি ও বৃদ্ধদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করা,র দাবী জানান। ১৫নং ওয়ার্ড হাফিজুর রহমান সুমন অভিযোগ করেন প্রচার-প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে। পুলিশ ও নির্বাচন অফিসে অভিযোগের পরেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না তিনি। ১৬নং ওয়ার্ড আনিসুর রহমান বিশ্বাস ভোটের দিন সাধারণ যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা, ১৫নং ওয়ার্ড আমিনুল ইসলাম মুন্না ও ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আবু সায়েম ভুয়া ভোট না দিতে পারে সে বিষয়ে তদারকি রাখা, ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আশফাকুর রহমান কাকন বহিরাগতরা ক্যাম্পেইন ও শোডাউন করতে পারবে কিনা জানতে চান। ০৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুর রহমান বলেন, নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন করে নেয়া হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এটি আচরনবিধি ভঙ্গ কিনা ও ব্যবস্তা নেয়ার দাবী জানান। ০৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সাজ্জাত হোসেন তোতন প্রতিদিন শত শত নারী পুরুষ ভাড়া করে প্রচার-প্রচারণা করছে। টাকা দিয়ে ভোট করার জন্য চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। ০৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী পিকু ইভিএমে শূন্য ভোট দেখিয়ে ভোট শুরুর দাবী করেন। ০১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আজিজুর রহমান স্বপন বলেন একাধিক অফিস ব্যবহার করা হচ্ছে। এ বিষয়ে অভিযোগ দিলে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মীর লিটন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলর অফিস, কর্মচারী ব্যবহার ও বিভিন্ন ভাতা দেয়ার প্রলোভন দিয়ে তালিকা করা হচ্ছে। ০৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফ হেসেন নির্বাচনী ব্যয় ১লাখের বেশী করছে। টাকা দিয়ে নারী পুরুষকে এনে ভোটের ক্যাম্পেইন করছে কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না।২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী বাদশা হাওলাদার অবিযোগ করেন তাকে হুমকি দিচ্ছে বর্তমান কাউন্সিলর গাউসুল আজম।  ০৩নং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী সিডিসির সদস্যদেরকে নির্বাচনের কাজে লাগানো হচ্ছে। ০৫নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও ০৭নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর সাবিয়া ইয়াসমিন আঙ্গুরা বুথে এজেন্ট দিতে না পারলে ভোটের ফলাফল পাওয়ার উপায় কি জানতে চান। ০৮নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী হালিমা ইসলাম, ১০নং ওয়ার্ড সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মিনতি রায় অভিযোগ করেন সিডিসি দিয়ে প্রভাবিত করছে এবং ভয়ভীতি দিচ্ছে। প্রধান অতিথি মেয়র, কাউন্সিলর র্থীদের এসব অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশনা দেন।

উন্মুক্ত আলোচনায় উঠে আসা বিভিন্ন অভিযোগ ও প্রশ্নের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের বক্তব্যে অনেকগুলো অভিযোগ এসেছে। বিশেষ করে টাকার বিনিময়ে ভোট কেনা ও প্রচারনা করা। এগুলোর প্রমান পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশন যেমন কঠোর ব্যবস্তা নেবে। তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ও সাধারন মানুষকে এ অনৈতিক কর্মকান্ড ও অপকর্ম প্রতিহতে অহিংস উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি প্রতিটি প্রার্থীকে ভোট কেন্দ্রের বুথে নিজেদের পোলিং এজেন্ট দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, যদি কেউ বুথে এজেন্ট না দেন তবে তার দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না। বুথে পোলিং এজেন্ট নেই বা তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে মিডিয়ার কাছে এ ধরনের অভিযোগ না আসে সেজন্য কমিশনকে সহযোগীতার আহবান জানান তিনি।

খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো: জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার জেনারেল (অব:) মোহাম্মদ আহসান হাবিব খান ও নির্বাচন কমিশন সচিব মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন কেএমপি কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁঞা, ডিআইজি মো: মঈনুল হক, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফিন, পুলিশ সুপার মো: মাহবুব হাসান, রিটার্নিং অফিসার মো: আলাউদ্দিন, জেলা নির্বাচন অফিসার ফারাজী বেনজীর আহমেদ প্রমুখ। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে নির্বাচন কর্মকর্তা, পুলিশ ও প্রশাসনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ##