![](https://dainikmadhumati.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
####
সুন্দরবনের মাটির উপরে জ্বলতে থাকা আগুন নিভেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী। তবে আগুন লাগা এলাকাকে আগামী ২থেকে ৩দিন বিশেষ পর্যবেক্ষনে রাখা হবে। একই সাথে সোমবারও আগুন সম্পূর্ণ নেভাতে কাজ করা সকল বাহিনী ও টিম আবারও মাটির ভিতরের আগুন খুজে নেভানোর কাজ করবে। তিনি জানান, গত শনিবার দুপুরের দিকে চাদপাই রেঞ্জের আমুরবুনিয়া এলাকায় লাগা আগুন নেভাতে রবিবার সকাল থেকে বনবিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোষ্টগার্ড, র্যাব-পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করে এ আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। রবিবার বিকেলে তিনি আমুরবুনিয়া এলাকায় সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তিনি কয়েক কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখেছেন। তিনি বনের উপরের বেডের কোথাও আগুন জ্বলতে বা আগুনের শিখা দেখেননি। তবে তিনি আশংকা করছেন সুন্দরবনের মাটির প্রকৃতি ভিন্ন থাকায় ওই এলাকার মাটির ণীচের স্তরে কোথাও আগুন থাকলেও থাকতে পারে। সেই আশংকা থেকেই রাতের বেলায় পর্যবেক্ষনের জন্য বন বিভাগের কর্মীদের দিয়ে ২০সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। যারা রাতের বেলায় আগুনের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
তিনি আরও জানান, সিডর ও আইলার পর ওই এলাকায় মাটির বেড উচু হয়ে যাওয়ায় জোয়ারের সময় পানি আসে না। সে কারনে ওই স্তানে আগুন লাগলে নেভানো অনেক কষ্টসাধ্য। আগুনে ৪থেকে ৫একর এলাকায় ছড়িয়েছিল। সে কারনে আগুনের ঘটনার স্থান থেকে ৫একর এলাকায় ফায়ার লাইন করা হয়েছে। পরে সেখানে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগের পাম্প দিয়ে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় নদী ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় স্তানীয় মানুষ যাতায়াত ও গরু-ছাগল চরিয়ে থাকে। সেজন্য এলাকাবাসীর কেউ পরিকল্পিতভাবে কেউ আগুন দিতে পারে, জেলে-মৌয়ালের ও বাওয়ালীদের অসাবধানতা বশত আগুন পড়তে পারে, মাছ শিকারীদের ও ব্যবসায়ীদের দ্বারা হতে পারে, প্রাকৃতিক ও সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ কিনা সব বিষয়েই বিবেচনায় রেখে তদন্ত করে মূল কারন নির্ধারণের প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে দশটায় সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের সম্মেলন কক্ষে এ প্রেস ব্রিপিং করেন তিনি।
প্রধান বন সংরক্ষক আগুনের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সোমবার খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দোকে প্রধান করে শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করার ঘোষনা দেন। তিনি বলেন, এ বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ১০কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদনসহ সুপারিশ প্রদানের জন্যও বলা হবে। তিনি বলেন, চাইদাপাই রেঞ্জের ওই এলাকার ভোলা নদী, খড়িয়ারবেড় ও খড়মা খাল শুকিয়ে যাওয়ায় হরহামেশায় গরু-ছাগল ও মানুষ বনের মধ্যে ঢুকে যায়। একই সাথে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পানির প্রকট সংকট দেখা দেয়। ২০০৮-০৯ সালে এই ঘাল ও নদী খনন করা হেয়ছিল। কিন্তু ইতিমধ্যেই আবারও ভরাট হয়ে গেছে। সেজন্য আগামী শুষ্ক মৌসুমের আগেই সুন্দরবনের প্রকৃতি বজায় রেখেই এই তিনটি নদী ও খাল খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ খাল-নদী খননের ামধ্যমে যদি পানির ব্যবস্থা করা যায় তাহলে অনেক সুবিধা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০২ সালের পর গত ২২বছরে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ২৫বার আগুন লেগেছে। সেসব আগুনের ঘটনায় বন বিভাগ তদন্ত করে অনেক সুপারিশ করেছে। সেসব সুপারিশের বেশ কিছু বাস্তবায়নও হয়েছে। ২০২১সালে যে আগুনের ঘটনা ঘটেছিল সে ঘটনা মোরেলগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়েছিল। সে মামলায় তিনজনকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য দুটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন পাম্প কেনা হয়েছে এবং ২০জন করে ৪০জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। একইভাবে সুন্দরবনের কিছু এলাকায় লাইলন ফেন্সিং করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যা দ্রুতই বাস্তবায়ন করাসহ এমন আরও কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে সবকিছুকেই বিবেচনায় রেখে এবার স্থায়ীভাবে আগুনের ঘটনার কবার্যকর সমাধানে বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে সব বিষয়ে পর্যবেক্ষন কওে পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায়, রেঞ্চে, বিভাগে ও খুলনায় দায়িত্ব পালনের উল্লেখ করে আরও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন।
প্রেস ব্রিপিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহাম্মদ মহসীন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করিম, নলিয়ান রেঞ্জের এিিসএফ মো: হাসানুর রহমান, সদর রেঞ্জের এসিএফ একেএম হাসানসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ##